২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৩০

কেবিন ক্রু সংকটে বিমানে বাড়ছে না যাত্রীসেবার মান

 নিজস্ব ১০টি সহ বহরে মোট ১৬টি উড়োজাহাজ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। আরও পাঁচটি উড়োজাহাজ যোগ হবে আগামী বছরের মধ্যে। একই সঙ্গে নতুন রুট যোগ, ফ্লাইট বৃদ্ধিসহ বেড়েছে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন। কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে বাড়েনি কেবিন ক্রু’র সংখ্যা। ফলে আকাশপথে বাড়ছে না বিমানের যাত্রীসেবার মান। বরং এয়ারলাইনসটির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতাকে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন এভিয়েশন খাতের সংশ্লিষ্টরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট শিডিউল ও কেবিন ক্রু নিয়ে বেশিরভাগ যাত্রীর অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারাও অভিযোগ করেন—ইন ফ্লাইট সার্ভিস নিয়ে। রাসেল মিয়া ১৬ আগস্ট বিমানের ফ্লাইটে দোহা থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, ‘খাবারের মান ভালো। ফ্লাইটও সময়মতো এসেছে। কিন্তু কেবিন ক্রুদের আচরণ আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। আরেক যাত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘৭ অক্টোবর দুবাই থেকে চট্টগ্রামে এসেছি বিমানের ফ্লাইটে। ডিউটি ফ্রি শপের কথা বলা হলেও কেবিন ক্রু’রা ডিউটি ফ্রি প্রোডাক্ট নিয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি।’ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে গত মাসে বিমানের ফ্লাইটে ঢাকায় আসি। খেয়াল করে দেখলাম, প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথা বলেন কেবিন ক্রুরা।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য চুক্তি করে। চুক্তি অনুসারে সব উড়োজাহাজ এরইমধ্যে সরবরাহ করেছে বোয়িং। নিজস্ব ১০টি সহ বহরে বর্তমানে ১৬টি উড়োজাহাজ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। চুক্তি অনুসারে ‍উড়োজাহাজগুলো কবে নাগাদ সরবরাহ করা হবে, তা ছিল পূর্বনির্ধারিত। নির্ধারিত সময়ে বহরে উড়োজাহাজ যোগ হলেও বাড়ানো হয়নি কেবিন ক্রু’র সংখ্যা। এজন্য বিমান পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, বিমানে বর্তমানে কেবিন ক্রু’র সংখ্যা প্রায় ৪২৭ জন। যদিও উড়োজাহাজ ও রুট বাড়ার কারণে ন্যূনতম কেবিন ক্রু দরকার ৬৫০ জন। প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় অতিরিক্ত চাপ পড়ছে কর্মরত ক্রুদের ওপরে। একইসঙ্গে বিমানের যাত্রীদের অভিযোগও কমছে না। বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু’র সঙ্গে কথা বললে তারাও স্বীকার করেন—প্রয়োজনের তুলনায় কেবিন ক্রু’র সংখ্যা কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। একই কারণে কেবিন ক্রুদের নানা জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু জানান, ক্রু সংকটের কারণে একজন ক্রুকে অনেক বেশি চাপে থাকতে হচ্ছে। প্রয়োজনেও ছুটি নিতে পারছেন না। ক্রুদেরকে ফ্লাইটে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি পাইলটদের নানাভাবে সহায়তা করতে হয়। সেই সময় কোনও যাত্রী ডাকলে রেসপন্স করা কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, একই সময়ে একাধিক যাত্রীর ডাকে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন যাত্রীরা ভাবেন, তাদের ইগনোর করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মতে, একটি উড়োজাহাজে ন্যূনতম কতজন কেবিন ক্রু থাকবেন, তা আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুসারে ঠিক করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নিয়ম অনুসারে একটি উড়োজাহাজে যে কয়টি দরজা থাকবে, ন্যূনতম সেই কজন কেবিন ক্রু থাকতে হবে। তা না-হলে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেবে না বেবিচক। তবে যাত্রীসেবার জন্য ফ্লাইটে ন্যূনতম সংখ্যার চেয়ে বেশি কেবিন ক্রু রাখতে কোনও বাধা নেই। বিমানে বর্তমানে ন্যূনতম সংখ্যক কেবিন ক্রু দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি মেডিক্যাল টেস্টে অতিরিক্ত ওজনের কারণে কয়েকজন কেবিন ক্রুকে ফ্লাইট থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে ক্রু সংকটের কারণে সাময়িক ছাড়পত্র দিয়ে আবারও তাদের ফ্লাইটে নেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘বিমানের কেবিন ক্রু সংকট আছে। তবে রাতারাতি এর সমাধান করা সম্ভব হবে না। প্রায় ২০০ ক্রুর পদ শূন্য রয়েছে। সম্প্রতি ৭৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে, যা চলবে চার মাস। তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই আবারও কেবিন ক্রু নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ধাপে ধাপে আমরা কেবিন ক্রু নিয়োগ সম্পন্ন করবো।’

প্রকাশ :নভেম্বর ১৮, ২০১৯ ২:১৪ অপরাহ্ণ