নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানে সিসিডিআর নামে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র সঞ্চয়ের বিপরীতে মোটা অংকের টাকা ঋণ প্রদানের ফাঁদে ফেলে সংস্থাটি ১৬শ গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। শুক্রবার ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা সংস্থাটির কার্যালয় ও মাঠ কর্মীদের ঘেরাও করে ম্যানেজারসহ ৩ মহিলা কর্মীকে আটক করে। এরা হলো সংস্থাটির ম্যানেজার ম্যাকোওয়া মারমা, মাঠ কর্মী ববি বড়ুয়া ও সীমা দাশ। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিছুদিন আগে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জাহেদুল আলমকেও একই অভিযোগে রাঙ্গামাটি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এদিকে ধার দেনা করে সঞ্চয় হিসাবে টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকরা চরম বেকায়দায় পরেছেন। শুধু তাই নয় এনজিও সংস্থাটির টাকা আত্মসাতের খবরে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পরেছেন। এ ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। শতাধিক নারী পুরুষ গ্রাহক মধ্যমপাড়ার সিসিডিআর অফিসের পাশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা এ সময় মাঠ কর্মীদের একটি বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে বান্দরবানে সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ (সিসিডিআর) নামে এনজিও সংস্থাটি কাজ শুরু করে। সংস্থাটির মূল কার্যালয় রাঙ্গামাটিতে। বান্দরবানে সংস্থাটি মধ্যমপাড়ায় শাখা অফিস খুলে মাঠকর্মী দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকা সংগ্রহ করে। সংস্থাটিতে বর্তমানে প্রায় ১৬শ গ্রাহক রয়েছে। দৈনিক ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত জমা নিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদী গ্রাহক সৃষ্টি করে সিসিডিআর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে বান্দরবানে। প্রথম পর্যায়ে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা প্রদান করলেও গত দু বছর থেকে সংস্থাটি গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করে। এ প্রসঙ্গে আমানতকারী আক্তার জানান, দৈনিক ২০ টাকা ও ৫০ টাকা জমায় তিনি দুটি হিসাব খুলেন সিসিডিআরে। কিন্তু সঞ্চয়ী হিসাবের মেয়াদ দুবছর পার হবার পরও তিনি টাকা পাননি। প্রথমে তার নিজের নামে পরে তার স্বামীর নামে হিসাব খুলে এখন টাকা না পাওয়ায় তিনি অস্বস্থিতে ভুগছেন। টাকার জন্য স্বামী প্রায় সময়ই সংসারে ঝামেলা করছে। অন্যদিকে আনুচিং মারমা জানান, দৈনিক ৫০ টাকা হারে পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়ী হিসাব খুলে এখন কোন টাকাই পাচ্ছেন না। লভ্যাংশসহ তার মোট টাকার পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬০ টাকা। মূল টাকা তিনি আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
সংস্থাটির বান্দরবানের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার ম্যাকোওয়া মারমা জানান, রাঙ্গামাটি অফিসের নানা সমস্যার কারণে তারা সময়মত গ্রাহকদের টাকা বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। গ্রাহকদের কাছ থেকে যা টাকা তুলা হচ্ছে তা দিয়ে কিছু কিছু গ্রাহকদের দেনা শোধ করা হচ্ছে বাকি টাকা দিয়ে মাঠ কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। তবে ৩’শ থেকে ৪’শ গ্রাহক ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পাবে বলে জানান তিনি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকের সাথে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে জানান ম্যানেজার ম্যাকোওয়া মারমা।এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ম্যানেজারসহ ৩ জনকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ