নিহতরা হলেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫) এবং মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।
আহত ৪০ জনকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ১০-১৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানে হয়েছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক হিন্দু যুবকের নামে অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজ যায় বিভিন্নজনের নামে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। রবিবার বেলা ১১টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের তৌহীদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি না করার জন্য বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে পুলিশ অনুরোধ জানায়। সাধারণ মানুষ আসার আগে বিক্ষোভটি বন্ধ ঘোষণা করতে বলেন। তাদের অনুরোধে দুই ইমাম সকাল ১০টার দিকেই যেসব লোক আসছে তাদেরকে নিয়ে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি সমাপ্ত করেন। কিন্তু এতক্ষণে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে ঈদগাহে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তারা ওই দুই ইমামের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং সেখানে থাকা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ওই মসজিদের ইমামের রুমে আশ্রয় নেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য উত্তেজিত মুসল্লিদের ওপর ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে সেখানে থাকা মুসল্লিরা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বোরহানউদ্দিনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসছে বিজিবি ও কোস্টগার্ডও।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। আমরা হ্যাকের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আটক করেছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে গতরাতে স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে কথাও বলেছি। তারা বলেছিলেন আজকের প্রোগ্রাম হবে না। কিন্তু সকাল থেকে আমাদের কাছে খবর আসে সেখানে মাইকিং হচ্ছে এবং স্টেজ বানানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমরা উপস্থিত মুসল্লিদের সাথে কথা বলেছি এবং আমি নিজে সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। তারা সবাই আমার বক্তব্য শুনেছে।
এসপি বলেন, যখন আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি তখন এক দল উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে একটি রুমে গিয়ে আশ্রয় নিই। যখন তারা আমাদের রুমের জানালা ভেঙে ফেলছে তখন আমরা প্রথমে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ি। পরে এতে কাজ না হওয়ায় উপরের দিকে গুলি চালায় পুলিশ। এতে আমার জানা মতে একজন পুলিশ সদস্যের বুকে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন। আমরা আহত অবস্থায় যাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। তবে বাকি আরও থাকতে পারে সেটা আমাদের কাছে তথ্য নেই।
জানা যায়, শুক্রবার বিকালে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আল্লাহ ও রাসুল সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কিছু কথাবার্তা কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে ম্যাসেজ করা হয়। এক পর্যায় কয়েকটি আইডি থেকে ম্যাসেজগুলোর স্ক্রিনশর্ট নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজন প্রতিবাদ জানালে বিষয়টি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সন্ধ্যার পর বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন থানায় আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে জিডি করতে আসেন। এ সময় পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব চন্দ্রকে তাদের হেফাজতে রাখে। এ ঘটনায় রবিবার ডাকা সমাবেশেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।