দেশজনতা অনলাইনঃ কারাবন্দি চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড.কামালের নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতারা। তবে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টি সরকারের অনুমতি পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে।
রবিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জোটের বৈঠক শেষে জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব এ কথা জানান।
আসম আব্দুর রব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমরা যারা দেখা করতে যাবো, তাদের নামের তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে দিয়ে আসবো। আগামী ১-২ দিনের মধ্যে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো।’ তিনি বলেন, ‘অনুমতি পেলে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়াকে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যাবেন।’
২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবরার হত্যার প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশের এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি বলেও জানান রব।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার কামাল হোসেনসহ ফ্রন্ট নেতাদের কাছে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বিশেষ করে দলের তৃণমূলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল— কামাল হোসেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যদিও সর্বশেষ ঐক্যফ্রন্টের সভায় তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন প্রথমবারের মতো। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের একবছর পূর্তির সময়ও বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার বিষয়টি ফ্রন্টে আলোচনা ছিল। যদিও ওই সময় কামাল হোসেন সিঙ্গাপুরে থাকায় কোনও অগ্রগতি হয়নি।
বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ একজন দায়িত্বশীল মনে করেন, কামাল হোসেনসহ ফ্রন্ট নেতাদের বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পুরো বিএনপিতে নতুন উদ্যম তৈরি করবে। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনপরবর্তী যে প্রশ্ন ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল, তা কেটে যাবে। এক্ষেত্রে এই দায়িত্বশীলের প্রত্যাশা, কামাল হোসেন বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখে এসে আইনি বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবেন।
গত বছর গ্রেফতারের পর বিএনপির নেতারা কামাল হোসেনের কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি রায় পড়ে পরামর্শ দেবেন।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়টি ফ্রন্টের প্রথম দফার একটি অন্যতম অংশ। আমরা তাকে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ তিনি অসুস্থ। সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি মিললে, এই সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কামাল হোসেনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন এই নেতা। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া ও এই বিষয়টিকে সরকার কীভাবে দেখছে, এর ওপর।’
নাম প্রকাশ না করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম আরেক নেতা অবশ্য বলছেন, ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তো একটা আলোচনা আছেই। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হচ্ছে, আন্তরিকতা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা ভাবলাম, বেগম জিয়া নিজে খুব অসুস্থ এবং নেতাকর্মীরা নিশ্চয় এর থেকে আশ্বস্ত হবেন, ঐক্যফ্রন্ট তাদেরই জোট। এতে করে পরবর্তী মুভমেন্ট সমন্বিত উপায়ে করা সহজ হবে।’