রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো কলেজছাত্র রাজীব হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার ঘটনায় তার দুই ভাইকে আগামী এক মাসের মধ্যে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে স্বজন পরিবহনের মালিকপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে স্বজন পরিবহনের করা আবেদনের শুনানিকালে রবিবার (১৩ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এসময় আদালতে রাজীবের পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এর আগে গত ২০ জুন দুই মাসের মধ্যে রাজীবের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
পরে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষ আবেদন জানায়। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত হাইকোর্টের ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত করেন এবং আবেদনটি শুনানির জন্য আজ রবিবার (১৩ অক্টোবর) দিন নির্ধারণ করেছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় মামলাটির শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে কলেজছাত্র রাজীবের। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রাজীবের।
এদিকে, বাস মালিকদের আপিলের পর গত বছরের ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ওই ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন। পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন।
পাশাপাশি রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ এ কমিটি গঠন করেন।
পরে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি তাদের প্রতিবেদনে গণপরিবহন নিয়ে কয়েকটি সুপারিশ দেয়।
এরপর হাইকোর্টে রুল শুনানি শেষে গত ২০ জুন দুই মাসের মধ্যে রাজীবের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।