২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২০

ক্যাসিনো পণ্যের এলসি খুলে বিপদে কয়েকটি ব্যাংক

সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই চার ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনোর পণ্য আমদানি করা চার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, এ থ্রি ট্রিড এন্টারপ্রাইজ, নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স। এছাড়া, আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খুলে ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করেছে। তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করছেন  না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এলসি খোলার সময় ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সতর্ক ছিলেন না। ফলে নামে-বেনামে ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করা সম্ভব হয়েছে। যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি হয়েছে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে  বলেন, ‘চারটি ব্যাংক ছাড়াও আরও  অন্তত ছয় থেকে সাতটি ব্যাংককে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এলসি খোলা হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে এলসি খোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনও পণ্যের এলসি খোলার সময় পণ্যের নাম, এর শনাক্তরণ নাম্বার, কী কাজে ব্যবহৃত হবে—এসব তথ্য উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু ক্যাসিনোর আমদানিকারকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খেলাধুলার উপকরণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব পণ্য আনা হয়েছে চীন থেকে। রাজধানীর কমলাপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও বেনাপোল কাস্টম হাউস দিয়েই এসব ক্যাসিনো পণ্য খালাস করা হয়। এদিকে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দামি ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। ক্যাসিনো মেশিন আমদানি করায় অন্তত ২০ প্রতিষ্ঠানকে তলব করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত পণ্য আমদানি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাসিনোসামগ্রীর যন্ত্রপাতি কারা আমদানি করেছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। এছাড়া, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম কিংবা জুয়া খেলার সামগ্রী যাতে বন্দর দিয়ে খালাস না হতে পারে, সেজন্য দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকর করতে বলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এরইমধ্যে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি যেন না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে খেলার সামগ্রী ও বিভিন্ন নামে ক্যাসিনো মেশিন আমদানি করেছে, এবং যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা এসব ক্যাসিনো মেশিন আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’ এছাড়া, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, আমদানি নীতিতে বলা আছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন কোনও পণ্য আমদানি করা যাবে না। ক্যাসিনো বা জুয়া যেহেতু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়, সে কারণে এ ধরনের পণ্য আমদানি করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বেশ কিছু ক্যাসিনোসামগ্রী জব্দ করেছে।

প্রকাশ :অক্টোবর ১৩, ২০১৯ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ