স্পোর্টস ডেস্ক:
১৭৬ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে অনেক ম্যাচজয়ী ইনিংসই খেলেছেন সাকিব আল হাসান। এর আগে করেছেন ৬টি সেঞ্চুরিও। কিন্তু গুরুত্বের বিচারে কোন ইনিংসটিকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবেন সাকিব? একই প্রশ্ন করা যায় মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও। মাহমুদউল্লাহ এ নিয়ে মাত্র তিনটি সেঞ্চুরি করলেন। সেই তিনটিই আইসিসি টুর্নামেন্টে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের টানা দুই সেঞ্চুরি করার অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর আবার তিন অঙ্কের দেখা পেলেন শুক্রবার। সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। কিন্তু এই তিনটি সেঞ্চুরির মধ্যে কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন মাহমুদউল্লাহ?
২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরিও দলকে জয় এনে দিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য সেঞ্চুরি করেও তাকে স্বাদ নিতে হয় পরাজয়ের। শুক্রবার আর সেই তিক্ততা নয়, এবার পেলেন জয়ের স্বাদই। সেই জয় যেনতেন জয় নয়। কার্ডিফে শুক্রবার যে জয় পেল বাংলাদেশ, অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয়, অকল্পনীয়, অসাধারণ-কোনো বিশেষণ দিয়েই আসলে এই জয়কে বোঝানোর জন্য যথেষ্ট নয়! ২৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ খেললেন অবিশ্বাস্য দুই ইনিংস। দুজনেই করলেন সেঞ্চুরি। সাবিক-মাহমুদউল্লাহকে কেউ প্রশ্নটা করেছিল কিনা জানা যায়নি। তবে অনুমান করে নেওয়াই যায়, দলের চাহিদা, ম্যাচের পরিস্থিতি বিচারে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ দুজনই হয়তো ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস হিসেবে বেছে নেবেন কার্ডিফের এই ইনিংসকেই। এ রকম তো চাইলেই রোজ রোজ খেলা যায় না! অনেক সাধনা-তপস্যার পরই না এমন স্বপ্নের ইনিংস খেলা যায়। দলকে ৩৩ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক যখন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ তো বটেই; বিশ্ব ক্রিকেটপ্রেমীরাও হয়তো হারটাকেই বাংলাদেশের নিয়তি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়তিকে বদলে ফেলেছেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দাঁড়িয়ে দুজনে মিলে মনোযোগী হন বিপর্যয় কাটিয়ে ইনিংস মেরামতের দিকে। এরপর ধীরে ধীরে দুজনেই খেলা শুরু করেন হাত খুলে। চাপে পড়লেও আস্কিং রানরেটটাকে নাগালের বাইরে যেতে দেননি কখনোই।
শুরুতে যে টিম সাউদি ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে, সেই সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ড, গতির ঝড় তোলা অ্যাডাম মিলনে-কাউকেও পরোয়া করেননি। ব্যাট হাতে সবাইকে শাসন করেছেন সমানতালে। দলের অবিশ্বাস্য জয়ের পথ তৈরি করতে খেলেছেন বাহারী সব শট। পঞ্চম উইকেটে গড়েছেন ২২৪ রানের জুটি। ওয়ানডে ক্রিকেটে যা যেকোনো উইকেটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। পঞ্চম উইকেটে বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই জুটির পথে সাকিব সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ছক্কা মেরে। মাহমুদউল্লাহ চার মেরে। সাকিবের ১১৫ বলে ১১৪ রানের ইনিংসে ১১টি চারের সঙ্গে ছিল ওই একটিই ছক্কা। মাহমুদউল্লাহ ১০৭ বলে হার না মানা ১০২ রানের ইনিংস ৮টি চারের সঙ্গে ছক্কা মেরেছেন দুটি। দলকে চিরস্মরণীয় জয় এনে দিতে গড়েছেন মাহমুদউল্লাহর চেয়ে সাকিব ১২টি রান বেশি করেছেন। বল হাতে ১০ ওভার বোলিং করেছেন। দুর্দান্ত একটা রান আউটও করেছেন। ফলে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি পেয়েছেন সাকিবই। কিন্তু সাকিবের ১১৫ বলে ১১৪ রানের ইনিংস এবং মাহমুদউল্লাহ ১০৭ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস-দুটি ইনিংসই বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে সমান নম্বরই পাবে।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর বীরত্বের সঙ্গে অন্যদের তুলনা চলে না। তবে তাসকিন আহমেদ এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের কথাও বলতেই হয়। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের একাদশে দুটি পরিবর্তন এনে দিন মাঠে নামে বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে মোসাদ্দেক, মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় তাসকিন। এউ দুজনেই বাংলাদেশের বোলিং নায়ক। লুক রনকিকে ফিরিয়ে দিয়ে তাসকিন এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু। পরে আউট করেছেন কিউইদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করা রস টেলরকেও। তবে বল হাতে তাকেও ছাপিয়ে যান মোসাদ্দেক। নিউজিল্যান্ড এক পর্যায়ে ৪৩ ওভারেই ৪ উইকেট হারিয়ে করে ফেলেছিল ২২৮ রান। এরপরই মোসাদ্দেকের স্পিন ভেল্কি। দুই ওভারেই মধ্যেই তিনি তুলে নেন ৩ উইকেট। তাতেই ৩০০ পেরোনোর ইঙ্গিত দেওয়া নিউজিল্যান্ডের ইনিংস আটকে যায় ২৬৫ রানে। তারপরও ১২ রানে ৩ এবং ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর সেই ২৬৫ রানকেই মনে হচ্ছিল অনতিক্রম্য হিমালয়! কিন্তু সাকিব-মাহমুদউল্লাহর উইলোতে ১৬ বল বাকি থাকতেই সেই হিমালয়ও টপকে গেছে বাংলাদেশ। বাঁচিয়ে রেখেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম বারের মতো সেমিফাইনালে উঠার আশা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ