বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদায় প্রভাব না পড়ার জন্য এই আদেশ জারি করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে। তবে, এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম।
আমাদের হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিকহারে মূল্য বৃদ্ধি রুখতে, পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করতে খোলা এলসিগুলোর বিপরীতে পেঁয়াজ রফতানি অব্যাহত ছিল।
হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, ‘দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া বাড়তি দামেই পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছিলাম। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজের এলসিও খুলেছিলাম, ভারতে সেই মোতাবেক ভারতীয় রফতানিকারকরা পেঁয়াজ সরবরাহ করছিল; যার প্রভাবে দেশের বাজারে ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছিল। ঢাকাতে যেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় উঠে গিয়েছিল তা কমে ৫৫ টাকায় এসেছিল, আর হিলি স্থলবন্দরে তা আরও কমে ৪৭ টাকা থেকে ৫০ টাকায় এসেছিল। কিন্তু, হঠাৎ করে রবিবার বিকালে ভারতীয় রফতানিকারকরা আমাদের জানিয়েছেন যে ভারত সরকার সিন্ধান্ত নিয়েছে, তারা কোনও প্রকার পেঁয়াজ রফতানি করবে না। রফতানি পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পেঁয়াজের যেসব এলসি খোলা ছিল, তার বিপরীতে তারা পেঁয়াজ রফতানি করতে টেন্ডার করছেন এবং পণ্য রফতানিও করছেন। সেইসঙ্গে রবিবার দুপুর পর্যন্ত যে সমস্ত পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু এলসির বিপরীতে টেন্ডার করলেও রবিবার দুপুরের পর থেকে যেসমস্ত এলসি খোলা হয়েছে এর বিপরীতে নতুন করে কোন টেন্ডার গ্রহণ করছে না।’
একদিনের ব্যবধানে আবারও হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ২ টাকা
পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় মাত্র একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আবারও পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ২ টাকা। একদিন আগেও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৭ টাকা থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৭টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
হিলি স্থলবন্দর পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ জানান, ভারত সরকার প্রতিটন পেঁয়াজ ২শ ৫০ থেকে ৩শ মার্কিন ডলার মুল্যে রফতানি করলেও ১৩ সেপ্টেম্বর তিনগুন বাড়িয়ে ৮৫২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। মূলত এরপর থেকেই দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করে। বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি ও এলসি খুলতে বেশি পরিমাণ টাকা লাগার কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কমে আসায় দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমার কারণে দাম বেড়ে যায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ২ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১০ দিন বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকবে। এসময় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে এলসি খোলাসহ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে করে পূর্বে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৭০ থেকে ২৯০ টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও এই সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই আমদানির পরিমাণ কিছুটা বেড়ে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪শ থেকে ৫শটন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এতে করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ আগের তুলনায় খানিকটা বাড়ার কারণে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।