চলতি বছরে বন্যায় ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ হয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে উঠে এসেছে।
টিআইবি বলছে, চলতি বছরের বন্যায় দেশের ২৮ উপজেলার মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ১৯৮৮ সালের ক্ষয়ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে এর বিপরীতে যে সরকারি সহায়তা মিলেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই ত্রাণ বিতরণেও হয়েছে নানামুখি অনিয়ম।
রবিবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ‘বন্যা ২০১৯ মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং ত্রাণ কার্যক্রমে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক জরিপ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।
টিআইবি প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা মোকাবেলা ও প্রস্তুতিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। সক্ষমতা থাকলেও প্রশাসনের অবহেলায় পর্যাপ্ত অর্থ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
টিআইবির গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালের বন্যায় স্থানভেদে ৪০ লাখ মানুষ ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত পানিবন্দি ছিল। সরকারি হিসাবে এ বন্যায় সারাদেশ মোট ১০৮ জন মারা গেছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে ১১৯ জন দেখানো হয়েছে। অথচ বন্যায় ঝুঁকি যথাযথভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। চর ও হাওরাঞ্চলে বন্যার নিয়মিত প্রকোপকে প্রশাসন স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত মহড়ার আয়োজন, সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক বার্তা প্রচার করা হয়নি। স্থানীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায়ে পদক্ষেপে ঘাটতি পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। বাঁধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কার এবং নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বন্যায় জনপ্রতিনিধি ও সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষ জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে প্রত্যাশা বেশি থাকে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণে সরকার ও জনপ্রতিনিধি ব্যর্থ হয়েছে বলেই আমরা মনে করি।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যাশিত ভূমিকা ছিল না। স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ কম, বাজেট ঘাটতি ছিল। এ ছাড়া প্রশাসনের ভূমিকাতে ঘাটতি ছিল। ত্রাণ বিতরণে চালের পরিমাণ কম দেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে দুবার দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীরা বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন তাদের কাজের অংশ হিসেবেই। তবে কোথাও কোথাও মন্ত্রীর পরিদর্শন ব্যয় মেটানো হয়েছে ত্রাণের বরাদ্দ থেকে।’
বন্যায় এনজিওগুলোর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন সংস্থাটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘বন্যায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের বন্যায় ২৮ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। পানিবন্দি ছিল ৪০ লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত ৩১ শতাংশ খানার ফসলি জমিতে বালু পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জমিতে বালুর কারণে আগামী দুই থেকে তিন বছর ভালো ফসল না হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে গবেষণায়।
টিআইবি বলছে, ১৯৮৮ সালের চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম পানি প্রবাহিত হলেও এবারের বন্যায় ক্ষতির ব্যাপকতা বেশি হওয়ার কারণ পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া ও পানি নদীর তীর ছাপিয়ে যাওয়া।