ক্যাসিনো, জুয়া ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে গত ১০ দিনের অভিযানে র্যাব এ পর্যন্ত ২০১ জনকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে অস্ত্র, বিদেশি মদ, সিগারেট, বিয়ার, হেরোইন, কষ্টি পাথরের মূর্তি, ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার সামগ্রী। জব্দ করা হয় কয়েক কোটি টাকা, ডলার, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে র্যাব ছাড়া পুলিশও বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। তবে সেসব অভিযানের বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জঙ্গিবিরোধী একটি মহড়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান মুখ থুবড়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। ক্যাসিনোর অভিযানকে নির্মোহভাবে দেখতে হবে। আমরা সব ক্যাসিনো বন্ধ করার জন্যই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছি। তাই এখন সব ক্যাসিনো বন্ধ।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে চারটি ও গুলশান এলাকায় একটি ক্যাসিনোতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। ফকিরাপুল ইয়াংম্যান্স ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও গোল্ডেন ক্লাবে পরিচালিত অভিযানে আটক হওয়া ২০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পরে তাদের কারাগারে পাঠায়। এসব ক্লাব থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতার
ক্যাসিনো, জুয়া ও চাঁদাবাজিবিরোধী অভিযানের প্রথম দিনেই ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। ফকিরাপুল ইয়াংম্যান্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময় তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। তার কমলাপুরের অফিসে অভিযান চালিয়ে মাদক ও প্রতিপক্ষের সদস্যদের নির্যাতনের জন্য রাখা ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার মেশিন জব্দ করে র্যাব। এসব ঘটনায় অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গুলশান ও মতিঝিল থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়।
ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযান
ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অভিযানে র্যাব সাইফুল ইসলাম, তুহিন মুন্সি ও নবীন হোসেন সিকদার নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় নগদ টাকা, বিদেশি মদ ও সিগারেট এবং ক্যাসিনো সামগ্রী। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও সূত্রাপুরের তিনটি স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু, রুপন ভূঁইয়া ও তাদের দুই সহযোগীর বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ পাঁচ কোটি চার লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আনুমানিক চার কোটি টাকা মূল্যের ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া একটি অবৈধ অস্ত্রসহ ছয়টি অস্ত্র জব্দ করা হয়।
গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) গ্রেফতার
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর একদিন পর ২০ সেপ্টেম্বর সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব ঠিকাদার জি কে শামীমের নিকেতনের ১১৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় সেখান থেকে তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, নয় হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুর ডলার এবং ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার, মাদক ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গুলশান তানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
কলাবাগান ক্লাবে অভিযান
গত ২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও খেলার তাস উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে। এ ঘটনায় অস্ত্র ও মাদক আইনে ধানমন্ডি ও গুলশান থানায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়।
ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান
একইদিন (২০ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সিলগালা করা হয় ক্লাবটির বার। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ক্লাবটির কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান
গত ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান লিংক রোডের এই ক্লাবটিতে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে দুই হাজার ২০০ বোতল বিদেশি মদ, ১০ হাজার ক্যান বিয়ার, আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশি সিগারেট, নগদ সাত লাখ টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ম্যানেজারসহ তিন জনকে। তবে এর একদিন আগে ওই ক্লাবে অভিযান চালিয়ে কিছুই পায়নি বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায়ও থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবে অভিযান
গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় এসব ক্লাব থেকে ওয়াকিটকি, টাকা গণনার মেশিন, ক্যাসিনো বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, জুয়ার বোর্ড, মদ ও সিসা উদ্ধার করা হয়। নগদ উদ্ধার করা হয় এক লাখ টাকা। এর চারদিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে র্যাব রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মনিপুরিপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে আটক করে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাব ও ক্যাসিনোয় অভিযান
রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি গত ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র, হালিশহরে আবাহনী লিমিটেড ও সদরঘাট এলাকায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এসব ক্লাব থেকে বিপুল পরিমাণ জুয়া খেলার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।