২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। মিয়ানমারে ফিরলে আবারও নিপীড়নের শিকার হতে পারেন এমন শঙ্কায় প্রত্যাবাসনে রাজি নয় তারা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পের একটি হলো কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প। চলতি মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের এ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন। এরইমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, নারীদের ওপর ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার যৌন নিপীড়নের মধ্য দিয়ে রাখাইনে গণহত্যা পরিস্থিতি জারি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেইন বলেছেন, ‘নিজের মেয়ে সন্তানকে নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অথবা শরণার্থী শিবিরে পৌঁছানোর আগে ভয়ঙ্কর মানসিক যন্ত্রণার শিকার হওয়া কোনও নারীর সঙ্গে যখন আপনি কথা বলবেন, তখন আপনি নিশ্চয় খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, এই কাজের [জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা] গুরুত্ব কতোখানি।’ রোহিঙ্গা নারীদের বিপন্নতাকে বুঝলে তাদের নিরাপদ-মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের স্বার্থে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব আনার গুরুত্বও অনুধাবন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৭ সালের আগস্টে সংকট শুরুর পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহায়তার জন্য ৭ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রস্তাব দিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। পরে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দেওয়া সামরিক বরাদ্দ বাতিল করে তারা। পেইন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে কেবল অসামরিক কাজে তহবিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেন ঊর্ধ্বতন সেনা নেতৃত্ব সিডনির বার্তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। তখন থেকেই অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার মানে হলো, দুর্যোগ মোকাবিলা কিংবা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মতো জায়গাগুলোতে সহায়তা দেওয়া। পেইন জানিয়েছেন, এই সহায়তার পরিমাণ ৪ লাখ মার্কিন ডলার। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা যে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আছেন, তাদের বেশিরভাগইদেশে ফিরে যেতে চান। তবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে সেখানকার পরিস্থিতি প্রতিকূল। পেইন মন্তব্য করেন, প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছামূলক, হতে হবে টেকসই।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও মন্ত্রী পেইন চলতি মাসের শেষের দিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দেবেন। তখন তারা অন্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন। প্লান ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সুসানে লেজিনা বলেন, ‘কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে আটকা পড়া পরিবারগুলোর প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া।’