আইন অনুযায়ী, এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য আগামী ১২০ দিনের মধ্যে বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাতে হবে। বলা হয়েছে বিশেষভাবে তৈরি ট্রাইবুনাল ছাড়াও তারা হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করতে পারবেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে আদালতে গিয়ে দীর্ঘ, জটিল এবং ব্যয়বহুল আপিল প্রক্রিয়ার সুবিধা কতজন নিতে পারবেন?
নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, এমন একজন, বঙ্গাইগাও জেলার বাসিন্দা আহম্মদ তৈয়ব। তিনি জানান নাগরিকত্ব প্রমাণে সরকার যেভাবে নিয়ম করে দিয়েছে, তিনি সে অনুযায়ী কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভারতীয় নাগরিক, এ নিয়ে আমার সব ডকুমেন্টস আছে, এখন এনআরসিতে যেহেতু নাম ওঠে নাই, তাই সরকার যেরকম নিয়ম করেছে যে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে, তাহলে সেটাই করব’।
নতুন ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন
আসামে অনেক দশক ধরে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে। সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে এখন ৩০০টি ট্রাইব্যুনালে ঠেকেছে। কিছুদিনের মধ্যে সরকার আরও এক হাজার ট্রাইব্যুনাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে- কারণ এনআরসি থেকে বাদ পড়া লাখ লাখ মানুষের মামলা এই আধা-বিচারিক ট্রাইব্যুনালগুলোকে সামলাতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে এই ট্রাইব্যুনালগুলোর কার্যক্রম নিয়ে। এ ব্যাপারে গুয়াহাটি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল কিভাবে কাজ করে, সেটা নিয়ে বিভিন্ন আইনজীবীর কাজ থেকে তিনি নানা অভিযোগের কথা শুনেছেন।
তার মধ্যে একটি হল ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীদের থেকে ইচ্ছামত সাক্ষ্য আদায় করা। তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে গেলে সাক্ষীদের ধমক দেয়া হয় যে এই তুমি এটা বল কেন, ওইটা বল। গরিব মানুষ সে-ও ধমকি পেয়ে ঘাবড়ে যায়। ট্রাইব্যুনালের কথামত দিয়ে দেয় স্টেটমেন্ট। এরকম শত শত কেইস আমাদের কাছে রিপোর্ট করছে কিলরা। জুনিয়র উকিলরাও কিছু বলতে পারেন না’।
এরকম অবস্থায় তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষগুলো কতোটা ন্যায়বিচার পাবে সেটা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। রশিদ চৌধুরী মনে করেন, এই মানুষগুলো শেষ পর্যন্ত কীভাবে থাকবে সেটা একমাত্র সরকারের ওপর নির্ভর করবে।
আপিল আবেদন কতটা কাজে আসবে
গুয়াহাটি হাইকোর্টের আরেক আইনজীবী আমান ওয়াদুদ। তিনি নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে অনেকদিন ধরে নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়ছেন। তিনি জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব প্রমাণের ব্যাপারে আপিল করার জন্য ১২০ দিন সময় দেয়া হয়েছে। সরকার এজন্য সব ধরণের আইনি সহায়তা দেয়ার কথাও জানিয়েছে। কিন্তু এটা আদৌ কতোটা কাজে আসবে সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আদালতের মামলা সবসময় একটু জটিল হয়। আর এখানে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার বোঝাটা আপনার ওপরই থাকবে। যা পুরো বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলবে।’
বিদেশি ট্রাইব্যুনালে নিজের কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান যে, অনেক সময় ব্যক্তির নাম, বয়স, কেইস অব রেসিডেন্সের ভুলের জন্য, এমনকি দু’জন ব্যক্তির ছোটখাট পরাস্পরবিরোধী বক্তব্য বা অসঙ্গত বক্তব্যের কারণে অনেকেই নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হন।
নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের এরপরে কী করণীয়, তা নিয়ে সরকার এরইমধ্যে একগুচ্ছ ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষদের ট্রাইব্যুনালে মামলা লড়ার সব খরচ সরকারই বহন করবে। কিন্তু সেই সব ঘোষণা এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের সবার কাছে এখনও পৌঁছায়নি।