দেশজনতা অনলাইন : ছাত্রদলের সংকট নিরসনে বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হতে যাচ্ছে। ঈদুল আজহার পরে ছাত্রদলের নতুন কাউন্সিলের তারিখের ঘোষণাও আসবে। একইসঙ্গে বহিষ্কৃত নেতাদের বহিষ্কার আদেশও প্রত্যাহার করা হবে। ছাত্রদল নেতাদের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে অনলাইনে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন তারেক রহমান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রথমে ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতাদের দাবির কথা শোনেন তারেক রহমান। এরপর তিনি তাদের কাছে সংগঠনটির আগামী দিনের নেতৃত্ব বাঁচানোর জন্য কাউন্সিলের জন্য সহযোগিতা চান। একইসঙ্গে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতাদের বহিষ্কার আদেশ তুলে নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করারও আশ্বাস দেন।
বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের অভিভাবক। তিনি ছাত্রদল নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা আমরা মেনে নেবো। আমাদের আর কোনও ক্ষোভ নেই।’
ইখতিয়ার রহমান কবির আরও বলেন, ‘তারেক রহমান ছাত্রদলের আগামী কাউন্সিলে সহযোগিতা করতে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যেভাবে চাইবেন সেভাবে আমরা সহযোগিতা করবো। তার নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করবো, যা তাকে কথা দিয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সন্তান ভুল করলে তাৎক্ষণিক শাসনও বাবা করে, পরক্ষণেই ক্ষমাও বাবা করে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করার মধ্যদিয়ে ছাত্রদলের চলমান সংকটের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। এখন কাউন্সিল যেকোনও সময় হয়ে যাবে।’
প্রসঙ্গত, ৩ জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। এরপর থেকেই বিলুপ্ত কমিটির নেতারা কমিটি গঠনের দাবিতে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। ২২ জুন আন্দোলনকারী ছাত্রদলের ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ছাত্রদলের সংকট সমাধানে দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেন তারেক রহমান। এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দফায়-দফায় বৈঠক করেন। কিন্তু, কোনও সমাধানে আসতে পারেনি। এতে তফসিল অনুযায়ী ১৫ জুলাই কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। ২২ জুন দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়- বাশার সিদ্দিকি, জহির উদ্দিন তুহিন, এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, দবির উদ্দিন তুষার, গোলাম আজম সৈকত, আব্দুল মালেক ও আজীম পাটোয়ারীকে।
বৈঠক সূত্র জানায়, সোমবারের (৫ আগস্ট) বৈঠকের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সংকট অবশেষে সমাধান হয়েছে। এই সপ্তাহে প্রত্যাহার করা হবে ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ। একইসঙ্গে ছাত্রদলের আগামী কাউন্সিলে বয়সের কারণে যেসব নেতারা বাদ পড়বেন, তাদেরকে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে যথাযথ মূল্যায়ন করার আশ্বাস দিয়েছেন তারেক রহমান। পাশাপাশি ছাত্রদলের কাউন্সিল ঘিরে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা, বাছাই ও আপিল কমিটিতে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া নতুন করে ছাত্রদলের কাউন্সিলের জন্য ঈদুল আজহার পর যেকোনও একদিন নির্ধারণ করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, তাদের দাবির মধ্যে ছিল বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার আর ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার আগ পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি করা। বিগত দিনে ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণকারী কথিত সিন্ডিকেট নিয়ে নিজেদের তিক্ততার কথাও তুলে ধরেন তারা। ক্ষুব্ধ নেতাদের সবার কথা শোনার পর তারেক রহমান বলেন, ‘ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের জন্য দ্রুত কাউন্সিল করতে চাই। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ জবাবে ছাত্রনেতারা কাউন্সিল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা দেন। পরে ক্ষুব্ধ নেতাদের দাবির বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন তারেক। তার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বহিষ্কৃত নেতাদের রাজনীতি করার আহ্বান জানান তারেক রহমান। ছাত্রনেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যেকোনও সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠক উপস্থিত থাকা বহিষ্কৃত সাবেক একজন সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা বৈঠকে এক যুগের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছি। আমরা বিএনপির হয়ে কাজ করতে চাই। সাময়িক সময়ে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্য তারেক রহমানের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও আমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানান।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ইখতিয়ার রহমান কবির, সহসভাপতি জয়দেব জয়, সহসভাপতি মামুন বিল্লাহ, সহসাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, যুগ্ম সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন, কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজ পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন প্রমুখ।