দেশজনতা অনলাইন : সাভার পরিবহনের দুটি বাস রাজধানীর আসাদগেট-রাপা প্লাজা পার হয়ে নিউ মার্কেটের দিকে যাচ্ছে। তবে একটি অপরটিকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সামনে সড়কের মাঝ বরাবর থামে একটি বাস। পিছু পিছু আসা অন্যটি বাম পাশ দিয়ে আগে আসা বাসটির দরজার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায়। ফলে প্রথম বাস থেকে নামতে গিয়েও পারেন না কয়েকজন যাত্রী। দ্বিতীয় বাসটি যাত্রী উঠিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রথম বাসটি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী নামায় এবং দ্রুত গতিতে ছুটতে ছুটতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচে থামে। এ চিত্র রবিবারের (২৮ জুলাই)।
ঠিক এক বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঠিক একইভাবে ২ বাসচালকের প্রতিযোগিতার কারণে প্রাণ হারান শহিদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী— দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীব। আহত হন আরও ১০-১২ জন শিক্ষার্থী।
বাসচাপায় শিক্ষার্থীদের এ হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিনই রাস্তায় নামেন রমিজ উদ্দিনসহ আশপাশের কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’। রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলনের আঁচ। রাস্তায় নামে লাখো শিক্ষার্থী।
তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি ওঠে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরাই নিজেরাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত গাড়ির কাগজ চেক করাসহ সব ধরনের যানবাহনকে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুরুতে এ আন্দোলনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিলেও পরে যুক্ত হন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথম কয়েকদিনের আন্দোলনে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও বাঁধা না দেওয়া হলেও পরবর্তীতে পুলিশি বাধা আসে। হেলমেটধারীদের হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা।
এরই মধ্যে ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় একটি খসড়া ট্রাফিক আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যদণ্ড এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কারো প্রাণহানি ঘটালে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। আন্দোলনকারীদের ৯ দফা দাবির মধ্যে কয়েকটি পূরণ ও বাকিগুলো পূরণের আশ্বাসে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শিক্ষার্থীরা ফিরে যান শ্রেণিকক্ষে। ৮ আগস্টের মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ২ সিটি করপোরেশনের তরফে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দৃশ্যমান পরিবর্তন খুব বেশি হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) তথ্যানুযায়ী, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে ১ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ হাজার ৫৫২ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৩৯ জন আহত হন। জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসহ সারাদেশে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
এই সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, দৈনিক চুক্তিতে চালক, কন্ডাক্টর বা হেলপারের কাছে গাড়ি ভাড়া দেওয়া, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, সড়কে চলাচলে পথচারীদের অসতর্কতাসহ ১০টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক বছরে কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। পথচারী পারাপার, জেব্রা ক্রসিং, ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাসসহ এসব বিষয়ে সরকারের যে অঙ্গীকারগুলো ছিল, সেগুলো পূরণ হয়নি। কোনও কোনও জায়গায় উন্নয়ন কাজের জন্য কিছু ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও পথচারী চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি।’
সড়কে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা সম্পর্কে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন করা এই নেতা বলেন, ‘এই সমস্যা সমাধানে মালিকদের আন্তরিকতা দেখা যায় না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো জন্য সবচেয়ে বড় অংশীদার গণপরিবহনের মালিক ও চালকরা। তাদের আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে। তাদের যে ভূমিকা রাখার কথা, সেটা দেখা যায় না। আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সরকারের এ সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালেই ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। চলে ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। সেপ্টেম্বরজুড়ে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হয় ট্রাফিক সপ্তাহ।
এ বছর আবার নতুন করে ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতা ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার কর্মসূচি হাতে নেয় পুলিশ। ১৫ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পালন করা হয় ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ। ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয় ট্রাফিকের বিশেষ অভিযান, চলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এরই মধ্যে ২৪ মার্চ থেকে ঢাকায় নামে স্পেশাল টাস্কফোর্স। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করে ১০ মে পর্যন্ত।
এই বিশেষ উদ্যোগ চলাকালে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভিং কিংবা নবায়ন না করা, হেলপারের গাড়ি চালানো, অর্থাৎ ট্রাফিক আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোটরসাইকেলে ৩ জন চড়া, চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেটমেট ব্যবহার, সিগন্যাল না মানা, উল্টোপথে যাওয়া এবং প্রভাবশালীদের আইন না মানার যে অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পথচারী ও চালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা গত এক বছরে অনেকগুলো কাজ করেছি। হেলমেট, দরজা বন্ধ করে গাড়ি চালানো, পরিবহন নেতা ও চালকদের নিয়ে সভা, তাদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করেছি। সার্বিকভাবে আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে দিন দিন জনসংখ্যা ও গাড়ি বাড়ছে। সে অনুযায়ী আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। নানা বাস্তবতা আছে।’
পথচারী চলাচল ও চালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনাটাই এই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলে সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। তার ভাষ্য, ‘আমরা চালক ও পথচারীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করছি। তাদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। ক্রমে অবস্থার উন্নতি হবে।’
আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিটি করপোরেশন অবকাঠামো তৈরির কাজ করে এবং বাকি ট্রাফিক পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব বলে জানান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রোড মার্কিং, বাস স্টপেজ, যাত্রী ছাউনি, জেব্রা ক্রসিং, অন স্ট্রিট পার্কিংসহ নানা ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় চক্রাকার বাস চালু হয়েছে। এছাড়াও কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সড়কে আরও উন্নতি হবে।’
সড়কে কতটুকু শৃঙ্খলা এসেছে তার সদুত্তর দিতে পারেননি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ও সিটিভিত্তিক উদ্যোগ আছে। নিরাপদ সড়কের বিষয়টা একরকম আর সড়কে শৃঙ্খলার বিষয়টা অন্যরকম। ঢাকায় রোড রেশনালাইজেশন-এর কাজ চলছে। এটা হলে ঢাকায় টোটাল শৃঙ্খলা আসবে। এই কাজ চলমান রয়েছে।’
ঠিক এক বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঠিক একইভাবে ২ বাসচালকের প্রতিযোগিতার কারণে প্রাণ হারান শহিদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী— দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীব। আহত হন আরও ১০-১২ জন শিক্ষার্থী।
বাসচাপায় শিক্ষার্থীদের এ হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিনই রাস্তায় নামেন রমিজ উদ্দিনসহ আশপাশের কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’। রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলনের আঁচ। রাস্তায় নামে লাখো শিক্ষার্থী।
তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি ওঠে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরাই নিজেরাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত গাড়ির কাগজ চেক করাসহ সব ধরনের যানবাহনকে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুরুতে এ আন্দোলনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিলেও পরে যুক্ত হন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথম কয়েকদিনের আন্দোলনে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও বাঁধা না দেওয়া হলেও পরবর্তীতে পুলিশি বাধা আসে। হেলমেটধারীদের হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা।
এরই মধ্যে ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় একটি খসড়া ট্রাফিক আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যদণ্ড এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কারো প্রাণহানি ঘটালে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। আন্দোলনকারীদের ৯ দফা দাবির মধ্যে কয়েকটি পূরণ ও বাকিগুলো পূরণের আশ্বাসে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শিক্ষার্থীরা ফিরে যান শ্রেণিকক্ষে। ৮ আগস্টের মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ২ সিটি করপোরেশনের তরফে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দৃশ্যমান পরিবর্তন খুব বেশি হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) তথ্যানুযায়ী, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে ১ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ হাজার ৫৫২ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৩৯ জন আহত হন। জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসহ সারাদেশে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
এই সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, দৈনিক চুক্তিতে চালক, কন্ডাক্টর বা হেলপারের কাছে গাড়ি ভাড়া দেওয়া, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, সড়কে চলাচলে পথচারীদের অসতর্কতাসহ ১০টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক বছরে কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। পথচারী পারাপার, জেব্রা ক্রসিং, ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাসসহ এসব বিষয়ে সরকারের যে অঙ্গীকারগুলো ছিল, সেগুলো পূরণ হয়নি। কোনও কোনও জায়গায় উন্নয়ন কাজের জন্য কিছু ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও পথচারী চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি।’
সড়কে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা সম্পর্কে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন করা এই নেতা বলেন, ‘এই সমস্যা সমাধানে মালিকদের আন্তরিকতা দেখা যায় না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো জন্য সবচেয়ে বড় অংশীদার গণপরিবহনের মালিক ও চালকরা। তাদের আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে। তাদের যে ভূমিকা রাখার কথা, সেটা দেখা যায় না। আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সরকারের এ সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালেই ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। চলে ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। সেপ্টেম্বরজুড়ে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হয় ট্রাফিক সপ্তাহ।
এ বছর আবার নতুন করে ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতা ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার কর্মসূচি হাতে নেয় পুলিশ। ১৫ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পালন করা হয় ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ। ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয় ট্রাফিকের বিশেষ অভিযান, চলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এরই মধ্যে ২৪ মার্চ থেকে ঢাকায় নামে স্পেশাল টাস্কফোর্স। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করে ১০ মে পর্যন্ত।
এই বিশেষ উদ্যোগ চলাকালে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভিং কিংবা নবায়ন না করা, হেলপারের গাড়ি চালানো, অর্থাৎ ট্রাফিক আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোটরসাইকেলে ৩ জন চড়া, চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেটমেট ব্যবহার, সিগন্যাল না মানা, উল্টোপথে যাওয়া এবং প্রভাবশালীদের আইন না মানার যে অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পথচারী ও চালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা গত এক বছরে অনেকগুলো কাজ করেছি। হেলমেট, দরজা বন্ধ করে গাড়ি চালানো, পরিবহন নেতা ও চালকদের নিয়ে সভা, তাদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করেছি। সার্বিকভাবে আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে দিন দিন জনসংখ্যা ও গাড়ি বাড়ছে। সে অনুযায়ী আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। নানা বাস্তবতা আছে।’
পথচারী চলাচল ও চালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনাটাই এই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলে সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। তার ভাষ্য, ‘আমরা চালক ও পথচারীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করছি। তাদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। ক্রমে অবস্থার উন্নতি হবে।’
আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিটি করপোরেশন অবকাঠামো তৈরির কাজ করে এবং বাকি ট্রাফিক পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব বলে জানান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রোড মার্কিং, বাস স্টপেজ, যাত্রী ছাউনি, জেব্রা ক্রসিং, অন স্ট্রিট পার্কিংসহ নানা ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় চক্রাকার বাস চালু হয়েছে। এছাড়াও কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সড়কে আরও উন্নতি হবে।’
সড়কে কতটুকু শৃঙ্খলা এসেছে তার সদুত্তর দিতে পারেননি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ও সিটিভিত্তিক উদ্যোগ আছে। নিরাপদ সড়কের বিষয়টা একরকম আর সড়কে শৃঙ্খলার বিষয়টা অন্যরকম। ঢাকায় রোড রেশনালাইজেশন-এর কাজ চলছে। এটা হলে ঢাকায় টোটাল শৃঙ্খলা আসবে। এই কাজ চলমান রয়েছে।’