দেশজনতা অনলাইন : কোরবানিতে যত পশুর চাহিদা হওয়ার কথা, এই মুহূর্তে তার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে বলে হিসাব কষেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আবার অবৈধ হলেও নানা কৌশলে ভারত থেকে পশু আমদানিও বন্ধ নেই। ফলে কোরবানিতে পশুর সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে তারা তৎপর হয়। এতে সাময়িক সংকটে পড়লেও আখেরে লাভ হয়েছে বাংলাদেশের। গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক খামার। আর পশু পালন বাড়ায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে দেশ। গত কয়েক বছর ধরেই নিজেদের পশু দিয়েই কোরবানির শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর এক কোটি ১৫ লাখ পশু জবাই হয়েছে। আমাদের ছিল এক কোটি ১৫ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু। এবার আমরা গতবারের তুলনায় পাঁচ শতাংশ চাহিদা বেশি ধরেছি। তাতে এক কোটি ১১ লাখ থেকে এক কোটি সাড়ে এগারো লাখ হবে। কিন্তু আমাদের আছে তার চেয়ে বেশি।’
বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি গবাদিপশু। গত বছর কোরবানি দেয়া হয়েছিল এক কোটি পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৭০টি পশু। তবে প্রতি বছরই কোরবানির সংখ্যা বাড়ে। গতবারের চেয়ে ১০ লাখ বেশি কোরবানি হলেও এবার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে খামারির সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি। আর বর্তমানে দেশে যত পশু আছে, তার কোনগুলো কী অবস্থায় আছে, তারও একটি হিসাব আছে।
কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে হৃষ্টপুষ্ট গরু আছে ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৬টি। মহিষ আছে ৮৮ হাজার ৪৪৮টি। আর কিছুটা বয়স্ক এবং অনুৎপাদনশীল গরু ও মহিষ আছে ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৬টি। এগুলো প্রধানত জবাই করে খাওয়ার কাজেই ব্যবহার করা হয়।
হৃষ্টপুষ্ট ছাগল আছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭২, ভেড়া দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮টি। বিদেশ থেকে আনা দুম্বা বা এই ধরনের প্রাণী আছে আরও ছয় হাজার ৫৬৩।
অন্যদিকে বয়স্ক ও অনুৎপাদনশীল ছাগল ও ভেড়া আছে ৫১ লাখ ৯০ হাজার ২৯০টি। এগুলোও প্রধানত মানুষের খাবার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
কোবরানির পশুর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাজশাহী বিভাগ। সেখানে আছে ১০ লাখের বেশি পশু। আর চার জেলা নিয়ে গঠিত বিভাগ সিলেট কোরবানির পশুর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে। সব মিলিয়ে সেখানে ছয় হাজারের কিছু বেশি পশু আছে।
চাহিদার চেয়ে পশুর মজুদ বেশি হওয়ায় ভারত থেকে গরু আসা বন্ধে তৎপর হওয়ারও নির্দেশ নিয়েছে সরকার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘সরকার ঈদুল আজহা পর্যন্ত ভারত থেকে সব ধরনের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এ ব্যপারে বিজিবিকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে সরকার।’
‘বাংলাদেশে খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি যে, গবাদি পশুর চাহিদায় আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে ভারত থেকে গরু আসা কমে আসছে। আমরা আশা করছি, অচিরেই ভারত থেকে গরু আসার সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আসবে।’
২০১৩ সালে ভারত থেকে অবৈধ পথে ২০ থেকে ২৫ লাখ গরু আসত। এখন এই সংখ্যাটি কমে ৯২ হাজারে নেমেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই, ১০ লাখ পশু অতিরিক্ত আছে।’
২০১৪ সালে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের (বর্তমানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী) ‘গোরক্ষা নীতি’র ধারাবাহিকতায় দেশটি থেকে গরু আমদানিতে ভাটা পড়ে। এর পর গরু-ছাগল পালনে স্বয়সম্পূর্ণতার ওপর জোর দেয় সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়ায় বর্তমানে আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।