২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৫৮

ডেঙ্গু: হাসপাতালে শয্যা পেতে সিরিয়াল

দেশজনতা অনলাইন : রাজধানীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। প্রতি ঘণ্টায় এই রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গতকাল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৩ জন রোগী।

প্রয়োজনের তুলনায় ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক হাসপাতাল রোগী রাখতে না পেরে ফেরত দিচ্ছে। আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে শয্যা পাওয়ার জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখছেন। হাসপাতালের বেড খালি হওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন তারা।

সেন্ট্রাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আসন পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ভর্তি করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী তাদের হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেলারেল (অব.) এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, জুলাইয়ের শুরু থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এক হাজার ১২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৫৯৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। আর বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫২৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ধানমন্ডির সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৯৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৩ জন।

হাসপাতালটির অধিক্ষক লে. কর্নেল (অব.) ডা. মো. রফিকুল আলম জানান, হাসপাতালটির নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছয়জন রোগী রাখার ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে এই ছয়জনের পাঁচজনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি জানান, আগত রোগীদের মধ্যে অনেকেই তাদের ফেরত পাঠাতে হয়েছে। কারণ হাসপাতালটির আসন সংখ্যা পূর্ণ হওয়ার পরে রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। আবার অনেক রোগীই বেড খালি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

ল্যাবএইড হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। আসন স্বল্পতার কারণে এখানেও রোগীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে শনিবার রোগীর চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় কম রয়েছে বলে  জানিয়েছেন হাসতাপালটির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা সাইফুর রহমান লেলিন।

এই কর্মকর্তা জানান, ৩০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০ জন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য বাড়তি দুটি ইউনিট খোলার পরেও তাদের জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানেও অনেক রোগী বেডের অপেক্ষায় রয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ২৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে ল্যাবএইড।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালটিতে তুলনামূলকভাবে রোগীর ধারণক্ষমতা বেশি। প্রায় ৬০০টি আসন আছে এই হাসপাতালটিতে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত কোনো রোগীকেই বিনা চিকিৎসায় তারা ফেরত পাঠাননি। আর ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে সবরকম প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

হাসতাপালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মো. আব্দুস সবুর মিয়া  জানান, তাদের হাসতাপালে বর্তমানে ১২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এ ছাড়া অনেক রোগীকেই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে ছুটি দেয়া হয়েছে।

পরিচালক বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা ছাড়া কাউকে ফেরত দিচ্ছি না। পর্যাপ্ত বেড আছে। প্রয়োজনে বেড আরও বাড়ানো হবে।’

বেশ কিছু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিতে ভর্তি হওয়া রোগীদের থেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এখানে এমন চিত্র নেই উল্লেখ করে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘আমরা রোগীদের সেবা দিই। এক্ষেত্রে কারও যদি টাকার সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা আছি, সমাজসেবা আছে। সব মিলিয়ে আমরা ৩০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিচ্ছি।’

হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে সেটা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তারা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারি থাকার পরেও শনিবার আরও দু’শ মশারি কেনা হয়েছে। সেই সাথে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পুরো হাসতাপালের সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৪০ শয্যাবিশিষ্ট ডেঙ্গু সেল চালু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের নিচতলায় এই সেল চালু করা হয়।

৪০ শয্যার মধ্যে ২৫টি শয্যা কেবিন ব্লকে এবং অন্য শয্যাগুলো ডি ব্লকের মেডিসিন বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলে শনিবার সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

প্রকাশ :জুলাই ২৮, ২০১৯ ১২:১৫ অপরাহ্ণ