পাঠদান বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চারটি কলেজ রয়েছে। বন্ধ থাকা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই দুর্গম চরে অবস্থিত। এছাড়া বন্যা ও ভাঙনের মুখে থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হুমকির মুখে রয়েছে আরও ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গাইবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।.
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হোসেন আলী জানান, ‘বন্যার পানিতে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাঠ তলিয়েছে। কোনও কোনও বিদ্যালয়ের মাঠ ও ক্লাস রুমে কোমর পানি উঠেছে। কিছু বিদ্যালয়ের চারপাশে বন্যার পানি থৈথৈ করছে। আবার দুর্গত এলাকার অনেক মানুষ বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে পাঁচ উপজেলায় চলমান বন্যায় ২৮১টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে সদর ও ফুলছড়িতে তিনটি বিদ্যালয়। পানি কমলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা হবে। তবে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য বন্ধের দিনসহ অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জানান, ‘বন্যায় বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও অনেক প্রতিষ্ঠানে বর্ন্যাতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কারণে জেলার ৮৪টি মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। ভাঙনের ফলে একটি বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০টি মাদ্রাসা। এছাড়া কয়েকটি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে পাঠদান শুরু হবে। পাঠদান বন্ধ ও বিদ্যালয় বিলীনসহ ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।.
গত ১১ জুলাই থেকে উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে গাইবান্ধায় একে একে সাত উপজেলার প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ বির্স্তীণ জনপদ প্লাবিত হয়। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেড় লাখ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন চার লাখ মানুষ। অধিকাংশ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে কোনও রকমে আশ্রয় নিয়েছেন উচু বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে। দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বন্যায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানির নিচে। ভেসে গেছে অন্তত ৩০০ পুকুর ও খামারের মাছ। পানির প্রবল চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কাঁচাপাকা প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক। ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮টি। পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে দুই শিশু ও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।