২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:১০

‘আমাগো জন্য কি একটু মায়াও হয় না’

দেশজনতা অনলাইন : হাতিয়া দ্বীপের নলেরবর চর এলাকায় স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস শীপ্রা রাণী দের। স্বামী ছোট্ট একটি টং দোকান করে সংসারের খরচ যোগান। কিন্তু এতে পরিবারের ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থা।

শীপ্রা রাণী পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। তাই তিনি ওই এলাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ানোর দায়িত্ব নেন। যে যতটুকু পারতেন, সহযোগিতা করতেন। কিছুদিন পর স্থানীয়দের অনুরোধে বাসা থেকে পাঁচ মাইল দূরে অবস্থিত আমিনবাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মনে খুব আশা- এবার বুঝি সৃষ্টিকর্তা তার দিকে মুখ তুলে তাকাবেন। বেতন পেলে পরিবারের হাল ধরা যাবে। কিন্তু তার আশায় গুড়েবালি। বিনা বেতনে ১৩ বছর ধরে ওই স্কুলে পড়িয়ে আসছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সে সোনার হরিণের (বেতন) সাক্ষাৎ পাননি।

এরই মধ্যে বছর কয়েক হলো স্বামী অসুস্থ। এখন সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়েছে শীপ্র রাণীর ওপর। একদিকে নিজের বেতন নেই, অন্যদিকে স্বামী অসুস্থ। কোথায় যাবেন, কী করবেন, বুঝতে পারছেন না।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে এ প্রতিবেদকের কাছে দুঃখের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন শীপ্রা রাণী দে।

কোলে দুই বছরের শিশুসন্তান। ঘন ঘন বমি করছে। হাতে একটা টোস্ট বিস্কুটের প্যাকেট। খেতে পারছে না। মাঝে মাঝে কাশি দিচ্ছে। ছোট্ট এ শিশুকে নিয়েই ১৬ জুন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ফুটপাতে পড়ে আছেন শীপ্রা রাণী। দাবি একটাই- বেতনের ব্যবস্থা হোক। তারা যেন সন্তান নিয়ে দু’বেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন।

শীপ্রা রাণী দে বলেন, ‘আমরা এসি গাড়ি, বাড়ি চাই না, শুধু দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা চাই। খেয়ে-পরে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের এ আকুল আবেদন। এটি তার কানে পৌঁছায়ে দিতে পারেন?’ বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে এ আকুল আর্জি তার।

তিন মেয়ে, এক ছেলে শীপ্রা রাণীর। বড় মেয়ে সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মেজোটা জেএসসি দেবে। আরেকটা মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ছে। সবচেয়ে ছোট দুধের শিশুটিকে কোলে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন তিনি।

কান্না করতে করতে গলা ধরে আসে শীপ্রা রাণীর। শিশুটিকে দেখিযে বলেন, ‘আজকে কয়দিন ধরে আমার বাবুর শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। ঠিকভাবে খাচ্ছে না। একে নিয়ে কই যাই? আমি বা কী করি? গত এক মাসে ১০ বেলা ভাতও ঠিকভাবে খাইনি। বাচ্চাকে কী খাওয়াব? দাদা, আমাগো জন্য কি কারো একটু মায়াও হয় না?’

‘২৯ দিন এখানে পড়ে আছি। গোসল করতে পারছি না। বাথরুম করতে কোথাও গেলে কেউ ঢুকতে দেয় না। সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। জানি না, আর কতদিন এখানে এভাবে পড়ে থাকতে হবে। কিন্তু ফিরে গিয়ে কী করব? সরকার ২০১৩ সালে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু সেটার কোনো বাস্তবায়ন দেখছি না। কখন সরকারের করুণা হয়, আমাগো প্রতি সদয় দৃষ্টি আসে, সে আশায় পথ চেয়ে চেয়ে এতটুকু আসছি। আর ফিরে যাওয়ার পথ দেখছি না,’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন শীপ্রা রাণী দে।

প্রকাশ :জুলাই ১৫, ২০১৯ ১২:৪৮ অপরাহ্ণ