২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৪০

হবিগঞ্জে বাড়ছে পানি ভাঙছে বাঁধ, পানিবন্দি ২০ হাজার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ ও আউশকান্দি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সে.মি উপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এ উপজেলার রাধাপুর গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে পাহাড়পুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মুখে। গতকাল রবিবার বিকেলে রাধাপুর অংশের বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এর পর থেকেই ঢুকতে থাকে পানি। ইতোমধ্যে কয়েকটি আধা-পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ, আউশকান্দি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ডাইকে ভাঙন দেখা আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। সরকারের পক্ষ থেকে পৌঁছায়নি ত্রাণ সামগ্রী এমন অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা।

ডাইক ভেঙে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং তিনটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এই ডাইকটি ভেঙে যাওয়ার ফলে হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের ভাটি এলাকা আক্রান্ত হতে পারে।

ইতোমধ্যে কসবা বাজু সুনাইত্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীঘলবাক সুলেমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বন্যার পানির স্রোত বেশি থাকায় বস্তা ফেলেও পানি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বন্যার অবনতি হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

কয়েকদিন ধরে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্টে পানি প্রবেশ করেছে। পাওয়ার প্ল্যান্টের আশপাশের পাঁচটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। আতঙ্ক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তৌহিদ বিন হাসান তার কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কন্টোলরুম খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পানির প্রবল স্রোত থাকায় বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা বেশ-কিছু পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দিয়েছি।’

কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে নবীগঞ্জ উপজেলার, রাজের বন্ধ, জোয়াল ভাঙা হাওর, বেলি বিল, বড় হাওর, গুঙ্গিয়াজুরি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি তীব্র আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা, রাধাপুর, দুর্গাপুর, জামারগাঁও, মাধবপুর, গালিমপুর, পানিপাতা, দৌলতপুর, মতুরাপুরসহ ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাঁও, পারকুল, ঢালার পাড়, দিঘরব্রামণ গ্রাম, পাহাড়পুর, ইসলামপুরসহ ১৫টি গ্রাম ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইনাতগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী উমরপুর, ইনাতগঞ্জের বাজারের ছড়া, পুর্ব-বাজার, ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, কালনী, চন্ডিপুর, বটপারা, বাউরকাপন, মোকামপারা, মোস্তফাপুর, রাজনগরসহ আশ পাশের শত শত গরীব পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

গরীব অসহায়দের সাহায্যে ওই ওয়ার্ডে মেম্বার আজির উদ্দিন আরজু সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করেছেন। এসব এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।

দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা মিয়া বলেন, ‘রাধাপুর গ্রামে কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে গেছে, প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে বিভিন্ন গ্রামে।’

আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন বলেন, ‘কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে যাওয়ার ফলে আউশকান্দি ইউনিয়নে প্রায় ১৫ টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙা হাওর, বেলী বিলের হাওরে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাতের বেলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন।’ এখনো সরকারি ত্রাণ সামগ্রী তার ওই এলাকায় পৌঁছেনি বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। বিশেষ করে আউশকান্দি, ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়ন বেশি আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলায় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছি। জরুরি প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক হট লাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন পানিবন্দি লোকজন।

হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম.এল সৈকত বলেন, ‘ভেঙে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের কাজ চলছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে আমরা বস্তা ফেলে ভাঙন টেকাতে কাজ করে যাচ্ছি।’

 

প্রকাশ :জুলাই ১৫, ২০১৯ ১:২২ অপরাহ্ণ