২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:১৬

বাজেটের আকার বাড়ছে, বাড়ছে ঋণের পরিমাণ

দেশজনতা অর্থনীতি ডেস্ক : বাজেটের আকার বাড়ছে।  সেই সঙ্গে বাড়ছে ঋণের পরিমাণ।  বৈদেশিক সহায়তা কমে গেছে, এর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিয়েছে সরকার।  অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা সে হারে বাড়ানো যায়নি। ফলে বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের ঋণ ক্রমেই বাড়ছে।  আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়াবে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন, করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিগত চার অর্থবছরে সরকারের ঋণ প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে।  আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে ভাবা হচ্ছে।  ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সরকারের সার্বিক ঋণ ছিল ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।  এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।  বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়াবে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৫ লাখ ৫২ হাজার ৩১০ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ ৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে আগামী অর্থবছরে দেশের জনগণের মাথাপিছু ঋণ গিয়ে ঠেকবে ৪৬ হাজার ২৭৯ টাকায়।  অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।  এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে চলতি অর্থবছর শেষে মাথাপিছু মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ২৭৭ টাকা।  গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর শেষে দেশে মাথাপিছু মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৩৭১ টাকা।  অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৫০৬ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাজেটের আকার বাড়ছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ছে না।  ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে চলেছে এবং বাধ্য হয়ে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার।  বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মোট ঋণ নেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪১ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়া ও সুষ্ঠু ঋণ ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতি বছর সরকারের ঋণ বেড়েই চলেছে।  এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দায়দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে দেশের আর্থিক খাত ও সরকার বড় ধরনের চাপে পড়বে।
তবে অর্থবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উদ্বেগজনক নয়। চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে জিডিপির ২৯ দশমিক ০২ শতাংশ। সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির মোট আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৫ লাখ ৫১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এদিকে বাজেট ঘাটতি পূরণে অতীতে বৈদেশিক উৎস থেকেই বেশি ঋণ (প্রায় ৬০ শতাংশ) নেওয়া হতো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ও অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর জোর দেওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।  বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৮৮ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ) এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা (জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ) ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১৭-২০১৮) অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিট ৬৬ হাজার ১৭ কোটি টাকা (জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা (জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ) ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
সরকারের ঋণের বোঝা কমিয়ে আনতে কর জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।  বর্তমানে দেশে কর জিডিপি অনুপাত প্রায় ১০ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর শেষে দেশে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ কোটি ডলার।  বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা দরে) হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।  এছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার।  এসব ঋণের গড় সুদ হার হচ্ছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গড়ে ৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পরিশোধের গড় মেয়াদকাল প্রায় ৩১ বছর। বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের যে স্থিতি রয়েছে, নতুন ঋণ না নিলে এটি ২০৫৭ সালের মধ্যেই পরিশোধ হয়ে যাবে এবং প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১৬০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে।

প্রকাশ :এপ্রিল ২, ২০১৯ ১২:০৬ অপরাহ্ণ