২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:১৮

‘বন্ড অপব্যবহারকারীদের দমন করা হবে’

দেশজনতা অর্থনীতি ডেস্ক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, ‘যারা বন্ডের অপব্যবহার করে খোলা বাজারে বিক্রি করছে তারা প্রকৃত ব্যবসায়ী না। তারা হলো ফটকা ব্যবসায়ী। এদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।’
অন্যদিকে বন্ডের অপব্যবহার বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যারা অন্যায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনেন। আমরা অপব্যবহারকারী কোনো প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দিতে আজ পর্যন্ত অনুরোধ করিনি। করব না। ’
সোমবার এনবিআর সম্মেলন কক্ষে রপ্তানি খাত ও বন্ডসংক্রান্ত রপ্তানি খাত (পোশাক, নিটওয়্যার, কম্পোজিট ও প্যাকেজিং) খাতের সংগঠনের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
রপ্তানি খাতে চলমান সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার এসব সুবিধা অব্যাহত রেখেছে বলেই রপ্তানির পরিধি বাড়ছে। যেসব সুবিধা অব্যাহত রয়েছে তা সামনেও থাকবে। কারণ আমরা এখনো সেই পর্যায়ে যাইনি। এখনো এসব খাতকে প্রণাদনা দিয়ে আরো উন্নত করা হবে।’
তিনি আরো বলেন,‘আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম, তবে পূর্বের চেয়ে জিডিপি বাড়ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা অব্যাহতি দেয়। এই অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রপ্তানি খাতের সব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করের বিষয়ে নজর থাকবে।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকের সভায় উপস্থিত সব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করছে। যাদের সবার বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। এদের মধ্য থেকেই বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে। আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অপব্যবহার রোধে আমরা জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল করছি।  সব প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সোচ্চার। যারা বন্ডের অপব্যবহার করে তারা প্রকৃত ব্যবসায়ী না তারা হলো ফটকা ব্যবসায়ী। তারা সুযোগ নেয়, নিয়ে কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এর ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দোষের ভাগিদারও হচ্ছে। এদের চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করছি। শক্ত হাতে তাদের দমন করা হবে।’
তিনি জানান, এগুলো বন্ধ করতে পলিসি পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যবসা করতে হলে স্বচ্ছ হতে হবে, রপ্তানি ছাড়া কোনো বন্ড হবে না। বন্ড অটোমেশনের কাজ দ্রুত চলছে। অটোমেশন হলে অপব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে।’
আলোচনায় বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় বাঁধা ব্যাংক ঋণ। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে আসলে আমরা অনেক জায়গায় সরকারকে ট্যাক্স দিতে পারতাম। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন জন নিয়ে যায়, তার ব্যয়ভার যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তারে ঘাড়ে এসে পড়ে। তাদের এই ব্যয়ভার বহন করতে হয়। সঞ্চয়পত্রের দাম ও ব্যাংক ঋণের সুরে হার যতক্ষণ না কমবে ততক্ষণ কোনো কিছুর সমাধান হবে না।’
তিনি আরো বলেন,‘পোশাক খাতের উৎসে কর শ্রমিক ২৫ শতাংশ। এনবিআর ফাইনাল সেটেলমেন্ট না লেখায় আমরা এর সুফল পাচ্ছি না। সেজন্য আমরা হয়রানি হচ্ছি।’
রপ্তানি খাত হিসেবে রিটার্ন দাখিল থেকে মুক্তি দেয়া, রপ্তানি বিল অব এক্সচেঞ্জের ওপর শ্রমিক ২ শতাংশ হারে স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট কর ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি রাখেন।
সভায় বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘প্রাইমারি টেক্সটাইল খাত রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে অবদান রাখার পরও অবহেলিত। এ খাতের অধীনে নিবন্ধিত সুতা উৎপাদন, সুতা ডাইয়িং, ফিনিশিং, কোনিং, কাপড় তৈরি, ডাইয়িং প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর ১৫ শতাংশ। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় করপোরেট কর ১২ শতাংশ করা দাবি করেন। পাশাপাশি ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি।’
এ ছাড়া তুলা আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার, মেশিন আমদানিতে বুয়েট টেস্ট রিপোর্ট প্রথা বাতিলসহ বেশকিছু দাবি করেন।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘করপোরেট কর তৈরি পোশাকের মতো প্লাস্টিক খাতেও দরকার। প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের ফলে পরিবেশ সুরক্ষা পাচ্ছে।’ সেজন্য প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের ওপর আবারো ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি করেন।
একই সঙ্গে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহত রাখা, ফায়ার ইকুইপমেন্ট আমদানিতে শুল্ককর সুবিধা দেওয়াসহ বেশকিছু দাবি করেন।  টেরিটাওয়েল খাত, এক্সেসরিজ খাতের প্রতিনিধিরাও করপোরেট করের সমতা আনার দাবি রাখেন।

প্রকাশ :এপ্রিল ২, ২০১৯ ১২:১৬ অপরাহ্ণ