সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষার্থী ওয়াশিম হাসনাতকে (২৩) ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বাসচাপায় হত্যা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সহপাঠিদের অভিযোগ, ওয়াশিম বাস থেকে নামার সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলে তিনি রাস্তায় পড়ে গিয়ে ওই বাসের চাপায়ই মারা যান।
ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ সহপাঠি ও শিক্ষার্থীরা শনিবার রাতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া তারা উদার পরিবহনের সিলেট কাউন্টারে ভাঙচুর করেছেন ।
এদিকে ওয়াশিমের মৃত্যুর ঘটনায় আজ রোববার ক্লাস বর্জনসহ শোক দিবস পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে শনিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মৌলভীবাজারের শেরপুরে বাস চাপায় ঘোরি মো. ওয়াশিম হাসনাতের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর ঘাতক বাসটিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর থানার বেগমপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামরুল ইসলাম।
সে সময় চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেলেও রাত ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে বাসের চালককে আটক করেছে পুলিশ।
আটক জুয়েল আহমদ (২৬) মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বাড়াউরা গ্রামের মৃত অজিদ মিয়ার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা।
নিহত হাসনাত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের ঘোরি মো. আবু জাহেদ মাহবুব ও ডা. মীনা পারভিন দম্পতির ছেলে।
ওয়াশিমের সহপাঠিরা জানান, ময়মনসিংহ থেকে সিলেট অভিমুখী উদার পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থী উঠেছিলেন। তারা শেরপুর এসে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য নেমে পড়েন। এ সময় ভাড়া নিয়ে বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে তাদের বাগবিতন্ডা হয়।
একপর্যায়ে ভাড়া পরিশোধ করে তারা বাস থেকে নেমে আসছিলেন। ওয়াসিম ছিলেন সবার পেছনে। তিনি বাস থেকে নামার আগেই তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর বাসের চালক স্পিড বাড়িয়ে দেন এবং বাসটি ওয়াসিমের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়।
গুরুতর আহত ওয়াসিমকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসমানী মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির এস আই ফারুক আহমদ।
তার মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে সহপাঠিদের কাছে পৌছামাত্র সন্ধ্যায় তারা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। পরে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায়ও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও উদার পরিবহনের কাউন্টারে ভাঙচুর করেন তারা।
এ সময় পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনেন।
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
এদিকে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ক্যাম্পাসে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। উপাচার্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, ‘এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড।’ এ ঘটনায় মামলা হবে বলেও জানান তিনি।