বিদেশ ডেস্ক
‘আমি সাতদিন জাহান্নামে ছিলাম’, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দিশিবিরে কয়েক মাস বন্দি থাকা কাজাখ মুসলিম ওরিনবেক কোকসিবেক তার মুক্তির পর গণমাধ্যমকে এক সাক্ষাতকারে একথা বলেন।
অবশ্য চীনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, এই বন্দিশিবির হলো ‘বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ এবং এর লক্ষ্য একজনকে সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা থেকে বের করে আনা।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘দি ইউএন কমিটি অন ইলিমিনেশন অব রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন’র(সিইআরডি) বরাত দিয়ে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি। এই কমিটি একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের কাছ থেকে শুনেছে উল্লেখ করে জানায়, এই ধরনের বন্দিশিবিরে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে বন্দি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এসব বন্দির বেশিরভাগই উইঘুর, কাজাখসহ অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘু। চীনে এক মিলিয়নেরও বেশি কাজাখ বসবাস করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কয়েক হাজার কাজাখ তেল-সমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানে চলে যায়। এখন চীনের কাজাখদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে।
ওরিনবেক কোকসিবেকের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানায়, তার হাতে হাতকড়া পরানো এবং পা বাঁধা হয়। তাকে একটা গর্তে নিক্ষেপ করা হয়। তিনি যখন তার হাত উঁচু করেন এবং ওপরে তাকান, তখন তারা পানি ঢেলে দেয়। তিনি আর্তনাদ করতে থাকেন। এরপর কী হয় এবং কতক্ষণ এভাবে ছিলেন তা জানেন না তিনি। অথচ তখন ছিল শীতকাল এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ছিল।
তিনি বলেন, তারা আমাকে বিশ্বাসঘাতক উল্লেখ করে বলে যে আমার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। অথচ এই কথা সত্য নয়।
এক সপ্তাহ পর তাকে আরেকটি জায়গায় নেয়া হয়। এখানে তিনি চীনা গান ও ভাষা শেখেন। তিনি তিন হাজার চীনা শব্দ শিখলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
তিনি বলেন, তারা এটাকে পুনঃশিক্ষা শিবির বলে। কিন্তু তারা যদি শিক্ষিত করতে চায়, তবে এসব মানুষকে হাতকড়া পরায় কেন?
তিনি আরও বলেন, কাজাখদেরকে বন্দি করা হয় কারণ তারা মুসলিম। চীনের লক্ষ্য হলো কাজাখদেরকে চীনায় পরিণত করা। তারা গোটা গোষ্ঠীটিই বিলুপ্ত করতে চায়।
বিবিসি জানায়, ওরিনবেক কোকসিবেকের কথাগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য অধিকারকর্মীর সংগ্রহ করা তথ্যের সঙ্গে তার কথার সাদৃশ্য আছে।
কাজাখস্তানে চীন দূতাবাসের কাছে বিবিসি এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জবাব দেয়নি।