নিজস্ব প্রতিবেদক
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার অসুস্থতা তুলে ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবীরা। উচ্চ আদালতের আদেশ দেখে এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে আনা হলে তিনি আইনজীবীদের অসুস্থতার কথা জানান। আইনজীবীদের তিনি বলেন, আমি অসুস্থবোধ করছি। চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে আইনজীবীদের পরামর্শ দেন তিনি। এরপর কারাগারের অস্থায়ী বিশেষ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতকে বিষয়টি অবহিত করেন আইনজীবীরা।
আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয়।
কিন্তু চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তার শারীরিক সমস্যাগুলো বাড়ছে। তার চিকিৎসার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে। এখন তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ তাই আমরা ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা আবারো তাকে চিকিৎসা প্রদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করছি। দয়া করে আদেশ দেন যাতে আমরা তার চিকিৎসা করাতে পারি।
এ সময় আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশটি আছে কি-না? জবাবে আইনজীবী বলেন, আদেশ আছে। আমরা তা দাখিল করবো। আদালত দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত কারাবিধি অনুযায়ী আপনি আদেশ দিতে পারেন।
এরপর আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশটি আদালতে দাখিল করেন। আমি দেখে পরে আদেশ দেবো।
আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানিয়েছেন বুধবার হাইকোর্টের আদেশ দাখিল করা হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়ে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ই জানুয়ারি চিঠি দেয়া হয়েছে। আদালতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে।
ওদিকে নাইকো মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পঞ্চম দিনের শুনানিতে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য রাখেন। তার শুনানি অসমাপ্ত রেখে আগামী ২০শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন আদালত।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জয়নুল আবেদীন মেজবা, জাকির হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
গতকাল দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। তার সঙ্গে ছিলেন গৃহকর্মী ফাতেমা। হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার পা থেকে কোমর পর্যন্ত সাদা কাপড়ে ঢাকা ছিল। বেগুনী রংয়ের শাড়ি পরা ছিলেন তিনি। বেলা ১২টা ২৮ মিনিটে নাইকো মামলার শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ২টা ১০ মিনিটে।
শুনানিতে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী? আমি অভিযোগের কিছুই খুঁজে পাইনি। শুধু একটি বিষয় জেনেছি আমার একটি অভিমত নেয়া হয়েছিল। ওই অভিমতটা আমার কোনো ব্যক্তিগত অভিমত নয়। যে অভিমত দিয়েছে প্রশাসন, সেটা আপনার (বিচারক) ও আমার সামনে নেই, এটাই আমার প্রথম বক্তব্য।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের মতামতে আটজনের নাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের নাম সাক্ষীতে, বাদী বা আসামির কোনো জায়গায়ই দেখছি না। সেখানে শুধু আমার নাম রয়েছে। কেন আমার নাম দেয়া হয়েছে? রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যেই আমার নাম দেয়া হয়েছে।
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

