২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১৮

ডাকসু নির্বাচনে যাচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) অংশ নেবেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনে জোটবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের। সংগঠনটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রস্তুতি। কোটা সংস্কার আন্দোলনও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। লাগাতার আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকার।

ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কোনো ছাত্রসংগঠনেরই তেমন কোনো সফল আন্দোলন সাম্প্রতিক সময়ে নেই। সেদিক থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা এই মঞ্চ দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবি আদায়ে সমর্থ হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কারও কারও মতে, ডাকসু নির্বাচনে আন্দোলনকারীরা অংশ নিলে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন কোটা আন্দোলন আর ডাকসু নির্বাচন পুরোপুরি ভিন্ন বিষয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের পেছনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিল এবং তারা সফলও হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক বিষয় কাজ করে। সে ক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে।’

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টনে মিলিত হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। আমরা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করে সফল হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, সেখানেও আমরা সফল হয়েছি। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তিতে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছি। এককথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় করার জন্য এবং তঁাদের সব সমস্যায় পাশে থাকার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনটি পুরো দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়লেও এটি শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। এর নেতৃত্বেও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু করার দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে ৪০ জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আন্দোলনকে ঘিরে ৮ জন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলে পরে তাঁদের অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এখনো ৩৬ জন সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব রয়েছে।

সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তাঁর শিক্ষাবর্ষটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের আওতায় না রাখলে যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক (ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র), রাশেদ খান (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের এমবিএর ছাত্র) এবং ফারুক হাসান (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের মাস্টার্সের ছাত্র)—এই তিনজনের যেকোনো দুজনকে সামনে রেখে প্যানেল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে জোটগতভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনাও রয়েছে সংগঠনটির। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্তই আমরা প্রাথমিকভাবে নিয়েছি। তবে পরিবেশ–পরিস্থিতি বিবেচনা করে জোটবদ্ধও হতে পারি আমরা। স্বাধীনতাবিরোধী যেসব ছাত্রসংগঠন রয়েছে, তারা বাদে যে কারও সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে।’

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন নিয়ে পরিবেশ পরিষদের সভা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েও তাঁরা সাড়া পাননি।

যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, কোটা বন্ধের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি–ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা কোনো অনুষ্ঠান করতে চাইলে মারধর করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চললে নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই সবকিছু নির্ভর করেছ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপের ওপর। তারা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারে, তবেই তাঁরা নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে অংশ নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়েছিলেন তাঁরা। তিনি তাঁদের বেলা একটায় যেতে বলেন। একটায় গিয়ে তাঁকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রক্টরের সঙ্গে সাক্ষাতে আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। যারা ডাকসুর ভোটার, তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। নির্বাচনের বিষয়ে যদি তারা কোনো মতামত দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে লিখিতভাবে তারা তাদের মতামত জানাতে পারে।’

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৩, ২০১৯ ২:২৬ অপরাহ্ণ