নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংকের ঋণ কারা পাবে, এ জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণ আবেদন পেলে ব্যাংক ওই গ্রাহকের পরিমাণ ও গুণগত সক্ষমতা মূল্যায়ন করে একটি রেটিং করবে। এই রেটিংয়ে কোনো গ্রাহক ৮০-এর বেশি নম্বর পেলে তাকে এক্সিলেন্ট (চমৎকার) ও ৭০–এর বেশি এবং ৮০–এর কম নম্বর পেলে গুড (ভালো) রেটিং পাবে। ‘চমৎকার’ ও ‘ভালো’ রেটিংধারী গ্রাহকেরাই কেবল নতুন ঋণ পাবে।
আর ৬০–এর বেশি এবং ৭০–এর কম নম্বর পেলে মার্জিনাল (প্রান্তিক) এবং ৬০–এর নিচে নম্বর পেলে আন–অ্যাকসেপ্টেবল (অগ্রহণযোগ্য) রেটিং দেওয়া হবে। ‘প্রান্তিক’ গ্রাহকের ঋণের ক্ষেত্রে অত্যধিক সতর্ক থাকতে হবে ব্যাংকগুলোকে। ‘অগ্রহণযোগ্য’ রেটিংধারী গ্রাহককে কোনো পরিস্থিতিতেই নতুন ঋণ দেওয়া যাবে না। আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে এ নীতিমালা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম’ নীতিমালার উদ্বোধন করেন গভর্নর ফজলে কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আবদুর রহিম, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
নতুন এই নীতিমালা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন ফজলে কবির। তিনি বলেন, আগের নীতিমালায় একটি ঋণ ঝুঁকি নিরূপণে একটি টেমপ্লেট ব্যবহার করা হতো। তবে নতুন নীতিমালায় ভিন্ন ভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টেমপ্লেট রয়েছে।
ঋণগ্রহীতা যাতে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। গ্রাহকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কোনো সমস্যা হলো কি না, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর কেবল ঋণ আদায়ের একমুখী প্রত্যাশা থাকলে চলবে না। গ্রাহকের সুবিধা-অসুবিধাও দেখতে হবে।’
গ্রাহকের সুখ-দুঃখে ব্যাংক পাশে থাকলে উভয়ই লাভবান হবে বলে মনে করেন ফজলে কবির। তিনি বলেন, ‘এটা ব্যাংক ও গ্রাহকের জন্য একটি “উইন উইন সিচুয়েশন” হবে। গ্রাহক নিজে থেকে সব ঋণ পরিশোধ করে দেবে—এমনটা আশা করলে হবে না। দরকার তাদের সহযোগিতা করা এবং যত্ন নেওয়া। আপনারা ইতিমধ্যে এ ধরনের কাজ করেছেনও। এই সানুগ্রহ বাড়াতে হবে ব্যাংকের সর্বত্র—প্রধান কার্যালয় থেকে শাখা পর্যায়ে। যাতে ঋণগ্রহীতা কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে। তবে ঋণের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে এবং ঋণটা সঠিক খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের এই গতি ধরে রাখতে হলে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন দরকার। ব্যাংকগুলো যদি গুণগত ও পরিমাণগত সক্ষমতা মূল্যায়ন করে ঋণ দেয়, তাহলে ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের উন্নয়ন ঘটবে।’