সহজে গন্তব্যে পৌঁছানোর জনপ্রিয় বাহনগুলোর মধ্যে সাইকেল ও মোটরসাইকেলের কদর এখন বিশ্বজুড়ে। সাইকেল চালানোর জন্য শারীরিক শক্তির প্রয়োজন। মোটরসাইকেল চালাতে লাগে জ্বালানি। এ দুইয়ের মাঝামাঝি কোনো বাহন যদি সহজে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এবং পকেটের টাকা বাঁচিয়ে দেয় তাহলে ইলেকট্রিক বাইক হবে সহজ সমাধান।
ব্যাটারি শক্তি চালিত তিন চাকার এমন বাইক নিয়ে এসেছে আকিজ মটরস। বাইকটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সাথী’।
বাইকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, সাইকেল বা মোটর বাইক চালানো না শিখেও খুব সহজে এটি চালানো যাবে। তিন চাকার বাইকটিতে ভারসাম্য রক্ষা করার কোনো ঝামেলা নেই। বাইক চালানোর ক্লান্তি দূর করতে হাতলযুক্ত চেয়ারে বসে পিঠ এলিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
আকিজ মটরসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুহাম্মাদ আবুল হাশেম বলেন, যানজটের এ শহরে নারীদের বাসে ভ্রমণ এক দুঃসহ যন্ত্রণা। কিন্তু ‘সাথী’ থাকলে অফিসে যাওয়া-আসাসহ বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা কর্মজীবীদের জন্য এখন আর কষ্টের নয়। নেই কোনো বাইক রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা। জীবন হবে অনেক সহজ।
তিনি বলেন, ‘সাথী’তে ৬০০ ওয়াটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে একবার পূর্ণচার্জে ই-বাইকটি শহরে ৫০-৫৫ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ৬০-৬৫ কিলোমিটার যেতে পারে। ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে এটি।
এ মডেলের ই-বাইকটির ব্যাটারি ক্ষমতা ৬০ ভোল্ট ও ২০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার। ৪-৬ ঘণ্টা চার্জে সারাদিন চলার নিশ্চয়তা মিলে তিন চাকার আকর্ষণীয় এ ই-বাইকে।
নিরাপত্তার জন্য ‘সাথী’র তিন চাকাতেই রয়েছে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক। ৩০০-১০ সাইজের চাকা এবং যথেষ্ট গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকাতে উঁচু-নিচু বা গতিরোধকগুলোও ‘সাথী’ সহজে টপকে যাবে। আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ই-বাইকটির পেছনের দুই চাকাতেই শক অ্যাবসর্ভার রয়েছে।
শব্দ ও জ্বালানিবিহীন এসব ই-বাইকে শক্তিশালী ও উন্নতমানের জেল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সাথী’তে সিটের মাঝখানে জিনিসপত্র রাখার সুপরিসর জায়গা রয়েছে। এছাড়া সিটের নিচের অংশে অনায়াসে নিজের হেলমেট থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র লক করে রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে।
সিটের হেলান দেয়ার পেছনের অংশেও রয়েছে খাঁচাসদৃশ স্টোরেজ। মোট কথা, নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র অনায়াসে এ ই-বাইকে নিয়ে চলে যেতে পারবেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়।
ই-বাইকটিতে থ্রটলের নিচে সুইচে রয়েছে গিয়ার। তিন পুশ গিয়ার সমৃদ্ধ এ ই-বাইকটিতে সহজে গিয়ার চেঞ্জ করে যেকোনো প্রতিকূল রাস্তাও অনায়াসে পাড়ি দেয়া যাবে। গিয়ার সুইচের পরই রয়েছে ব্যাক গিয়ার। সুইচটি চেপে বাইক থেকে না নেমে মোটরের সাহায্যে সহজে ই-বাইকটিকে পেছনে নেয়া যাবে। এ বাইকে পায়ের কোনো কাজ নেই। দুই হাতে ব্রেক রয়েছে। কোথাও পার্ক করে রাখার জন্য রয়েছে ব্রেক লকার।
‘সাথী’র ডান হাতে রয়েছে থ্রটল। থ্রটল যত ঘোরানো হবে ততই গতি বাড়বে। থ্রটল ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে বাইকের গতি কমে আসবে। এতে রয়েছে ডিজিটাল স্পিডো মিটার। ই-বাইকটির গতি, ব্যাটারির চার্জ, হাইবিম ইন্ডিকেটরসহ নানাবিধ তথ্য এতে প্রদর্শিত হবে। স্পিডো মিটারের সামনে উইন্ড শিল্ড রয়েছে। সামনের অংশে রয়েছে আকর্ষণীয় হেড এবং সাইড লাইট। চুরির হাত থেকে ই-বাইকটিকে রক্ষা করতে কি লকের পাশাপাশি রিমোট লকও ব্যবহার করা হয়েছে।
বাইকটির হ্যান্ডেল বারের ঠিক নিচেই রয়েছে পানির বোতল, মোবাইল ফোন, ওয়ালেট বা ছোটখাট জিনিসপত্র রাখার ঝুড়ি। বাইকের হাতলটি নমনীয় করে তৈরি করা হয়েছে। তাই সিটে বসার সময় হাতল ঘুরিয়ে সহজেই বসা যায়। পেছনের যাত্রীর পা রাখার জন্য বাইকটিতে অতিরিক্ত ফুট রেস্ট বা পাদানি সংযোজন করা হয়েছে।
আকিজ মটরসের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ ফারুক বলেন, পরিবেশ বান্ধব ই-বাইকটি ২৫০ কেজি পর্যন্ত ধারণ করতে পারে। সম্পূর্ণ মেইন্টেনেন্স মুক্ত ড্রাইসেলের ব্যাটারি ব্যবহার করাতে ই-বাইকটিতে আলাদা যত্ন নেবার প্রয়োজন হয় না।
‘কিনুন এবং চালান’ এই থিউরিতেই মূলত আকিজের ই-বাইক বাজরে ছাড়া হয়েছে। এছাড়া আমরা ‘সাথী’র ব্যাটারি এবং মোটরে ছয় মাসের বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করা হচ্ছে।