আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ছোট বড় সব দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই এখন আছেন হাইপার টেনশনে।
শেষ মুহুর্তের যাচাই-বাছাই ও দরকষাকষিতে কার ভাগ্যে জোটে সেই কাঙ্খিত মনোয়ন, এ নিয়ে বেশ চাপে আছেন সব দলের নেতাকর্মীরাই।
এবার দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাদেরকে শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের কথাও শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এ ব্যপারে বেশ শতর্ক।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। যে কোনো কঠিন মুহূর্তে জিততে পারে এমন ২২০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। রোববারের মধ্যে ৩০০ আসনের তালিকা চূড়ান্ত করার পর মঙ্গলবার নাগাদ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
আর এ সময়ে জোটের আসনগুলোতেও প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। জোটের আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতা হলে প্রার্থী ঘোষণা ২৫ নভেম্বর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলের ও জোটের মনোনীত প্রার্থীর ঘোষণা একসঙ্গে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, কমপক্ষে ছয়টি জরিপ সংস্থার রিপোর্ট শেষবারের মতো পর্যালোচনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসব জরিপের কিছু রিপোর্টে অসঙ্গতিও উঠে এসেছে। এক জরিপে কোনো প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও আরেক জরিপে পিছিয়ে আছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বিদেশি জরিপ সংস্থার দু’টি রিপোর্ট পর্যাবেক্ষণ করছেন। এর বাইরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও জরিপ চালিয়েছেন। সব পর্যবেক্ষণ করে ২২০টি আসনে দলীয় মনোনয়ন তালিকা তৈরি করেছেন তিনি। নেতারা আরও জানান, এখন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আবেদন ও তালিকাভুক্ত নেতার গুণগত মিল-অমিল ও জনপ্রিয়তার মাপকাঠি করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে আনা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন এগিয়ে আসছে। প্রার্থী ঘোষণার পর অনেক কাজ থাকে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সঠিক প্রক্রিয়ায় জমা দেয়ার সুযোগটি দিতে হবে। তাই আমরা আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণার কাজটি করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করব। এই তালিকা ২০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ঘোষণার প্রত্যাশা করছি।
জোটের প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, এটিও দ্রুত সম্পন্ন হবে। আমরা (আওয়ামী লীগ) ৩০০ আসনে দলীয় মনোনয়ন দিলেও যেসব আসনে জোটের প্রার্থী থাকবে সেখানে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
তবে প্রার্থী বাছাই ও ঘোষণায় একটু ধীরগতির কথা জানান আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি বলেন, আমরা চলতি সপ্তাহে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করলেও ২৫ নভেম্বরের দিকে তা ঘোষণা করা হতে পারে। এর মধ্যে জোটের প্রার্থীও চূড়ান্ত হবে। দুটো পৃথকভাবে ঘোষণা হলে তেমন কোনো সমস্যা নেই।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, মহাজোটের যেসব আসনে প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনে এখনও দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। এর বাইরে নতুন করে জোটে, মহাজোটে আসা দলগুলোর সম্ভাব্য জনপ্রিয় নেতাদের আসনেও প্রার্থীর নাম তালিকায় স্থান দেয়া হয়নি। আরও পর্যবেক্ষণ করে ৩০০ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে। জোটের আবদারে ২৫ নভেম্বরের দিকে একযোগেও প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে।
দলীয় মনোনয়ন বাছাই প্রসঙ্গে বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যালায়েন্সের (জোটের) সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কাজ শেষ হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে ৩০০ আসনে চার হাজার ২৩ জন নেতা আবেদন করেছেন। গড়ে প্রতিটি আসনে ১২ জন করে প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন।
বুধবার আবেদনকারী প্রার্থীদের নিয়ে গণভবনে অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসনপ্রতি এত মনোনয়নপ্রত্যাশী দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে মহাজোটের জন্য ছেড়ে দেয়া আসন দ্রুত প্রকাশের দাবি তুলেছে শরিক দলগুলোর নেতারা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্তের আগেই এ ঘোষণা চান তারা। নতুবা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার দিন একই সঙ্গে করার দাবি তাদের। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন ও জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
দ্রুত দলীয় ও জোটগত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করতে শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হয়। সেখানে জোটের আসনসহ কয়েকটি বিভাগের দলীয় প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ( ২৩ দলে সম্প্রসারিত) এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের প্রর্থীরাও আছেন বেশ স্নায়ুচাপে।