পরিবহন ধর্মঘটে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় শ্রমিকদের বাধায় আটকা পড়া অ্যাম্বুলেন্সে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তিনদিন পর সাত দিনের মেয়ে শিশুটির চাচা আকবর আলী ওরফে ফুলু মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ১৬০ থেকে ১৭০ জন শ্রমিককে।
শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। তাছাড়া শ্রমিকদের বিশৃঙ্খল এইসব কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম।
৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিন শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। বিভিন্ন জায়গায় ন্যক্কারজনক এ ঘটনার জন্য প্রতিবাদ কর্মসূচি করা হয়। প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে শ্রমিক নেতাদের হুকুমের আসামি করে মামলা করার দাবিও উঠে।
মামলার বাদী শিশু কন্যার চাচা আকবর আলী ওরফে ফুলু মিয়া বলেন, ‘বুধবার রাতে থানায় মামলা করেছি। অজ্ঞাতনামা আসামি করে অভিযোগ দেই। তিনটি জায়গায় বাধা দিয়েছে। ১৬০-১৭০ জনের মত শ্রমিক ছিল। সবাইকে তো চিনতে পারিনি। তাই নাম দেইনি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম বলেন, ‘মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত তাদের চিহিৃত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জড়িতদের চিহ্নিত করতে মাঠে গোয়েন্দারা কাজ করছেন। সঠিক যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনা দোষে কেউ হয়রানি হবে না।’
এর আগে গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই শিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ। তিনি পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে মামলা করার জন্য তাদের উৎসাহ ও সর্বোচ্চ আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন।
মামলা ও শিশুর পরিবার থেকে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৮ অক্টোবর সকালের দিকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
শিশুর অভিভাবকরা অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার পুরাতন বড়লেখা বাজার, দাসেরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্সটি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সটি চান্দগ্রাম নামক স্থানে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি আটকে চালককে মারধর করেন। প্রায় দেড়ঘণ্টা এখানে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকা থাকে। অ্যাম্বুলেন্স আটকা অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে গাড়ি ছাড়া পেলে শিশুটিকে পাশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।