রাজধানীর উত্তরখানে গ্যাস থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিকিৎসাধীন সুফিয়া বেগম (৫০) নামে আরো এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে ওই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া সুফিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুফিয়ার ভাতিজা আজিজুল ইসলাম (২৭) মারা যান। সন্ধ্যায় মারা যান তাঁর স্ত্রী মুসলিমা (২০)। বাকিদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গতকাল শনিবার (১৩ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে উত্তরখানের ব্যাপারীপাড়া এলাকার হেলাল মার্কেট সংলগ্ন ১১০/এ-১ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা বাড়ির নিচ তলায় ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ আটজন দগ্ধ হন। তাদেরকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন দগ্ধরা হলেন সুফিয়ার মেয়ে আফরোজা আক্তার পূর্ণিমা (৩০), পূর্ণিমার ছেলে সাগর (১২), সুফিয়ার ভাতিজি ও আজিজুলের বোন আঞ্জু আরা (২৫) ও তার স্বামী ডাবলু মোল্লা (৩৩), তাদের ছেলে আব্দুল্লাহ সৌরভ (৫)।
বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে আজিজুলের শরীরের ৯৯ শতাংশ ও তাঁর স্ত্রী উর্মির ৯৮ শতাংশ পুড়ে যায়। আর গুরুতর আহতদের মধ্যে সুফিয়া বেগমের শরীরের ৯৯ শতাংশ, তাঁর মেয়ে পূর্ণিমার ৮০ শতাংশ, পূর্ণিমার ছেলে সাগরের ৬৬ শতাংশ, নিহত আজিজুলের বোন আঞ্জু বেগমের ৬ শতাংশ, তাঁর স্বামী ডাবলু মিয়ার ৬৫ শতাংশ এবং তাঁদের ছেলে আব্দুল্লাহর ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে।
হতাহতরা সবাই একে অপরের আত্মীয়। নিহত আজিজুল উত্তরখানে মাছের খাবারের কারখানায় চাকরি করতেন। তাঁর ফুফু সুফিয়া বেগম বুয়ার কাজ করতেন। ডাবলু পেশায় রিকশাচালক। সাগর উত্তরা হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিশু আব্দুল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাঁরা ছোট্ট ছোট্ট তিন রুমে একত্রে থাকতেন।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, দগ্ধ সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শিশুসহ দুজন কম দগ্ধ হলেও শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
দগ্ধ আঞ্জু বেগম জানান, তাঁদের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। তাঁরা ব্যাপারীপাড়ার মেহেদী হাসান মাস্টারের তিনতলা বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকেন। দগ্ধ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও আশপাশের বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিতে ভর্তি করায়। সেখানে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিজুল মারা যান। পরে সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উর্মির মৃত্যু হয়।
আঞ্জু বেগম দাবি করেন, দুই সপ্তাহ ধরে তাঁদের বাসার গ্যাসলাইন থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল। বিষয়টি বাসার মালিককে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। গতকাল ভোরে তাঁদের একজন চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়। গ্যাসলাইন লিকেজ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, গ্যাসলাইন লিকেজ থাকায় রাতে পুরো ঘরে গ্যাস জমে যায়। ভোররাতে চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্যাসলাইনে লিকেজ পাওয়া গেছে।
গ্যাসলাইন লিকেজের অভিযোগ পাননি জানিয়ে বাসার মালিক মেহেদি হাসান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর চুলার সুইচ অন দেখা গেছে। আমার ধারণা, রাতে সুইচ বন্ধ না করায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
উত্তরখান থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, অসাবধানতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের বেলায় বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। চুলায় গ্যাস আসার পর দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হওয়ার পথ পায়নি। ভোরে চুলা জ্বালানো মাত্র চারপাশে আগুন ধরে সবাই দগ্ধ হয়েছেন।
আর্থিক সহায়তা : এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন।