সপ্তাহের মোট দিন সাতটি। সাত দিন আমাদের সাত রকম মেজাজ থাকে। প্রতিদিন কি আর এক রকমের আগ্রহ নিয়ে কাজ করা যায়? কর্মোদ্যম বাড়াতে প্রতিদিনকার খুব সাধারণ কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তা বেশ কার্যকর হয়। একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক মেহেদী মাহবুব জানান, ‘আমরা জোর করে টেবিলে বসে পড়াশোনা করি বা জোর করে অফিসে কাজ করি। জীবনে জোর করে খুব বেশি কিছু হয় না। প্রতিদিন যদি আমরা ইতিবাচক কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি তা ব্যক্তিত্বকে বদলে দিতে পারে।’
কীভাবে আরও কর্মোদ্যমী হতে পারেন
সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন: আপনার মন যতই খারাপ থাকুক না কেন, কিংবা দিনকাল খুব একটা ভালো না গেলেও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন ঘুম থেকে খুব সকালে ওঠার অভ্যাসে ব্যক্তিত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে অনেকটা সময় হাতে পাবেন। বেশি সময় নিয়ে বেশি কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন।
সকালে ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। দিনে শুরুতে ব্যায়াম সারা দিনের শক্তি জোগাবে। প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম আপনার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেও সহায়ক বটে। আপনাকে ব্যায়াম করতে দেখে পরিবারের ছোটরাও কিন্তু সকালে উঠতে উৎসাহী হবে।
পানি পান করুন: আমরা প্রতিদিন এতটাই কাজ করি যে পানি পান করতে ভুলে যাই। নিয়মিত বিরতিতে সারা দিনই পানি পানের অভ্যাস করুন। শুধু তা–ই নয়, একটু লেবুর শরবত নিয়মিত পানের অভ্যাস করে তুলুন।
সকালের নাশতার আগে ই–মেইল বা ফেসবুক নয়: আমরা ঘুম ভেঙেই দাঁত ব্রাশের আগে ফেসবুক কিংবা ই–মেইলে চোখ রাখি। দিনের শুরুতেই এমন অভ্যাস করে নিজের শক্তি খোয়াবেন না। দিনের শুরুটা যেন সারা দিনের মতো ইতিবাচক হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। যন্ত্র বা গ্যাজেটবিহীন সকাল কিন্তু তেমন খারাপ কিছু না। নাশতার আগে একটু ব্যায়াম বা যোগাসনে বসে দেখুন না, সারা দিন অন্য রকম কাটবে আপনার। জানালা দিয়ে সকালের আকাশ দেখেও সকালটা শুরু করে দেখতে পারেন।
সকালে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর নাশতা সারুন: বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অফিসের কাজের অছিলায় মুখে একটু চা কিংবা রুটি-পরোটা দিয়ে আমরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। সকালে চিনিযুক্ত খাবার পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন। পেটপুরে নাশতা করুন। নাশতায় সবজি কিংবা ফলের আধিক্য যেন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। দিনের শুরুতে পেটপুরে নাশতা সারা দিনে শরীরে শক্তি জোগায়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় কাজ করুন: অপরিষ্কার কিংবা অপরিচ্ছন্ন জায়গায় কারও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। আমরা আমাদের অফিসের ডেস্ক প্রায়ই অপরিষ্কার ও এলোমেলো করে রাখি। প্রতিদিন নিজের ডেস্ক পরিষ্কার করুন নিজে। পরিষ্কার ডেস্কে একদিকে কাজে যেমন মন বসে, তেমনি নিজের কাজের প্রতি যে আপনি আগ্রহী তাও প্রকাশ পায়। কয়েক মিনিট সময় নিয়ে টেবিল পরিষ্কার করে কাজ শুরু করুন, দেখবেন কাজে আগের চেয়ে বেশি মন বসছে।
সহজ কাজ দিয়ে শুরু করুন: আমরা দিনের শুরুতেই গতকালের জমিয়ে রাখা কঠিন কাজ শেষ করার চেষ্টা করি। এতে আমরা অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠি। প্রতিদিন চেষ্টা করুন খুব সহজ কোনো একটি কাজ দিয়ে দিন শুরু করতে। দিনের শুরু যদি একটি সহজ কাজ দিয়ে শুরু করেন তাহলে মনে এমনিতেই জোর আসে। একটি কাজ হয়ে গেলে তো মনে এমনিই উদ্যম তৈরি হয়।
একসঙ্গে বহু কাজ নয়: আমরা বহুমাত্রিক কাজ করার নামে একসঙ্গে অনেক কাজ নিয়ে বসি। দুই হাতে চারজনের কাজ করে যাই, এতে কিন্তু আসলে নিজেরই ক্ষতি হয়। একসঙ্গে কখনোই অনেক কাজ নিয়ে বসবেন না। একটি একটি করে কাজ শেষ করার অভ্যাস করুন।
এক সময়ে সব কাজ নয়: দিনের মধ্যভাগে আমরা মিটিং রাখি, কোনো প্রজেক্ট পেপার লিখতে চাই—সবই যেন একটি সময়ে করতে চাই। এক সময়ে কখনোই সব কাজ রাখবেন না। দিনের কর্মঘণ্টা অনুসারে কাজ ভাগ করুন। এক সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ কখনোই করবেন না।
‘এখনই’ চাপ পরিহার করে চলুন: এখনই জমা দিতে হবে কিংবা এখন না করলে হবে না—এমন কাজ পারতপক্ষে করবেন না। এই এখনই–র চাপে আসলে হিতে বিপরীত হয়, কাজে ভুলের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কেউ আপনাকে কাজের চাপ দিলে তাঁকে বুঝিয়ে বলুন।
সারা দিন কী করছেন তা খেয়াল রাখুন: প্রতিদিন কী কী কাজ করেন, কীভাবে করেন তা নিয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলুন। দিন শেষে ১০ মিনিট সময় রাখুন নিজের জন্য। একটি কাগজে অগ্রগতি কিংবা ব্যর্থতা বা বাকি কাজগুলো লিখে রাখুন।
নিজেকে পুরস্কৃত করছেন কি?: অফিসে ভালো কাজে বোনাস কিংবা পদোন্নতি হয়। সে তো অনেক সময় পরে, কিন্তু প্রতিদিন কি নিজেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কোনো কাজ করছেন? ধরুন, কোনো একটি প্রোজেক্ট পেপার ঠিক সময় জমা দিয়েছেন আপনি। এমন ক্ষেত্রে নিজেকে উজ্জীবিত করতে পছন্দের জুস খেতে পারেন কিংবা নিজের জন্য কোনো বই উপহার হিসেবে নিজেকে প্রদান করুন!
বিশ্রাম নিন: যত কঠিনই কাজ হোক না কেন বিশ্রাম নিতে শিখুন। অফিসে খুব চাপ থাকলে দুপুরের আহারের সময় একটু বিশ্রাম নিন। কাজের চাপে দুপুরের খাবার কিংবা বিশ্রামকে কখনোই অবহেলা করবেন না। বিশ্রাম আমাদের কর্মোদ্যম বাড়ায়।