বাংলাদেশের আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হয়েছে। আজ বুধবার এই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে।
আজ দুপুরে বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দীন এই রায় দেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী সে সময়ের মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন মারা যান। আহত হন কয়েক শ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
বিবিসি:
রায়ের খবর প্রকাশ করে বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ২০০৪ সালে রাজনৈতিক সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনার দায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ‘২০০৪ সালে সমাবেশে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময়ে ক্ষমতায় থাকা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে তাঁর অনুপস্থিতিতে যাবজ্ঝীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওই হামলা চালনা হয়। দলটির নেতা শেখ হাসিনা এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
দা গালফ টুডে:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দা গলফ টুডে তে শিরোনাম করা হয় ‘২০০৪ এর হামলায় বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড’। খবরে বলা হয়, আজ বুধবার বাংলাদেশের একটি আদালত বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বিরোধী দলের শীর্ষ পলাতক নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান (৫০) দেশ ছেড়ে লন্ডনে পলাতক আছেন। দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কারাবন্ধী হলে তারেক জিয়া বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এপি:
বার্তা সংস্থা এপির খবরে শিরোনাম ছিল ‘রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড’। খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনা অল্পের জন্য ওই সময় প্রাণে বেঁচে যান। এপির খবরে রায়ের খবরের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রতিক্রিয়া ও রায়ের সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, রায় দেওয়ার সময় দুই বার বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যাওয়ায় বিচারককে বাধা পেতে হয়। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল।
রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজেকে নিদোর্ষ দাবি করে বলেন, ‘আল্লাহ সবকিছু জানেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম না’।
আনন্দবাজার:
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘হাসিনার ওপর হামলা: মৃত্যুদণ্ড ১৯, খালেদা-পুত্র সহ যাবজ্জীবন ১৭ জনের’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে খুনের চেষ্টার দায়ে তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু-সহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা-পুত্র তারেক রহমানসহ ১৭ জনের।
এই হামলার তদন্তে শুরু থেকে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালানো হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে তদন্ত শুরু করে। বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। ২০০৮ সালের জুনে বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তাঁর ভাই তাজউদ্দিন, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) নেতা মুফতি হান্নান-সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সিআইডি। তদন্তে বেরিয়ে আসে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে।
হিন্দুস্থান টাইমস:
আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের শিরোনাম হয়েছে, ২০০৪ শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলেকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১৯ জনকে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পলাতক ছেলে তারেক রহমানকে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে (৫০) বিচারক পলাতক হিসেবে রায় ঘোষণা করেছেন। তিনি এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। যদিও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তার অভিবাসন অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে।
আল জাজিরা:
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ২০০৪ সালের হামলার ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড। দ্বিতীয় শিরোনামে ছিল, ২০০৪ সালের হামলার ঘটনায় বিরোধী দলের নেতা তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের আদালত।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ হামলা হয়। দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার চারপাশে একটি মানব ঢাল তৈরি করে তাঁকে রক্ষা করেন। এ ঘটনায় নির্মমভাবে নিহত হন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আইভি রহমান। মামলার নথিতে বলা হয়, বিএনপির দ্বারা এটি একটি ‘পরিকল্পিত হামলা’ ছিল।
রয়টার্স:
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম ছিল— ‘২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার রায়ে বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হামলার ২৪ জন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক। হতাহতরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছিলেন। রায়ের বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, এ রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবেন তারা। তারেক রহমানের ফাঁসি চাইবেন। অপরদিকে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন এই রায় প্রত্যাখ্যান করছেন তাঁ