আদালত প্রতিবেদক:
একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড মামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার দুটির বিচারকাজ ১৪ বছরেও শেষ হয়নি। তবে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলা দুটির রায় ঘোষণা করা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ।
এ মামলায় এখন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে মামলার যুক্তি উপস্থাপন চলছে। তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলেই রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেয়া সম্ভব হবে।’ রায়টি হলে দেশ আরও একটি দায় থেকে মুক্তি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করা হবে। আশা করছি, সেপ্টেম্বর মাসেই এই মামলার রায় ঘোষণা হবে।’
এ বিষয়ে লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থান শেষ করতে তিন থেকে চার দিন লাগতে পারে। এরপরে রাষ্ট্রপক্ষ ল’পয়েন্টে বক্তব্য দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন। এরপর রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। তবে আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।’
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন ২২ জন। আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। সর্বমোট ১০৯ দিন যুক্তি উপস্থাপন হয়েছে। এছাড়া শেষ হয়েছে ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলা তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পালাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।
মামলার ৪৯ আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা, পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল হক, খোদা বক্স চৌধুরী ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমানসহ ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
কারাগারে আটক আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিমসহ ২৩ জন আসামি।
অন্যদিকে, বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিনসহ ১৮ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।