২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৫৮

জনবল সঙ্কটে আইসিডিডিআরবির ডায়াগনস্টিক ইউনিটে সেবা বিঘ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ক্যাম্পাসে স্থাপিত ডায়াগনিস্টিক ইউনিটটি বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্ভুল রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে মানুষের কাছে ‘আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক’ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।

রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এ সেন্টারে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে ছুটে আসেন। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্য়ন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের কাজ চলে।

রুটিন ও বিশেষায়িত হেলথ চেকআপের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও এ ইউনিটটিতে বায়োকেমিক্যাল, হরমোন, ভিটামিন ও বিশেষায়িত প্রোটিন, থেরাপেটিক ড্রাগ মনিটরিং, ক্যান্সার মার্কার, হেপাটাইটিস ও ইনফেকশন ডিজিজেজ মার্কার, ইনফ্লামেটরি,অটোইমিউন ও সেপসিস মার্কার, সেরোলজিক্যাল টেস্ট, মাইক্রোবায়োলজি: কালচার ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল সেনসিটিভিটি টেস্ট, স্টুল, ইউরিন, বডি ফ্লুইডস, সিএসএফ ও অন্যান্য, হেমোটোলজিক্যাল টেস্ট ও মলিকুলার ডায়াগনস্টিক টেস্ট করা হচ্ছে।

বাইরের যেকোনো প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি তুলনামূলক বেশি হলেও নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যায় বলে ফি পরিশোধে কোনো আপত্তি নেই রোগীদের। কিন্তু সাধারণ মানুষের ‘আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক’ এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে আগের মতো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রক্তসহ অন্যান্য নমুনা দিতে ও রিপোর্ট সংগ্রহ করতে অনেক বিলম্ব হচ্ছে। এখানে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে টোকেনের মাধ্যমে সিরিয়াল মেনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহ, রিপোর্ট ডেলিভারি ও টাকা গ্রহণসহ অন্যান্য কাজের জন্য বেশ কয়েকটি কাউন্টার থাকলেও সেখানে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বিকেলের শিফটে ভোগান্তি হচ্ছে বেশি। ১০ মিনিটের কাজ করতেই ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডায়াগনস্টিক এ ইউনিটটিতে কর্মরত কয়েকজন জানান, জনবল সঙ্কটে তারা রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না। তারা জানান, আগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে গড়ে ৪শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৬শ’ রোগী আসতেন। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ শ’ থেকে ১৪শ’ তে দাঁড়িয়েছে। রোগীর চাপ বাড়লেও বাড়েনি জনবল।

তাদের দাবি, সকালের শিফটে কোনো সমস্যা নেই, বিকেলের শিফটে লোকজন কম থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিদর্শনকালে ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ওইদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ব্যাংকার এক নারী জানান, তিনি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে সিরিয়াল নিয়ে নমুনা দিতে অপেক্ষা করেন। যখন তিনি লাইনে দাঁড়ান তখন ২৭৮ সিরিয়ালের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। তার সিরিয়াল ছিল ২৯৫। এসময় কাউন্টারে মাত্র দুইজন কাজ করায় সময় বেশি লাগছিল। অনেকেই রিপোর্ট সংগ্রহ করতে এসেও বিলম্বের কারণে বিরক্ত হচ্ছিল।

প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওই নারীর সিরিয়াল আসেনি। পরে উপস্থিত রোগীরা সবাই হৈ চৈ করলে একজন কর্মকর্তা ছুটে এসে কোথাও থেকে আরও তিনজনকে ডেকে এনে কাউন্টারে বসান। লোক বসানোর পর মাত্র ১৫ মিনিটেই তিনি সিরিয়াল পান বলে জানান।

এ প্রতিবেদক কাউন্টারে কর্মরত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন সকালের শিফটে ১০ জন থাকলেও বিকেলে মাত্র চারজন কাজ করেন। আগের তুলনায় দ্বিগুনের বেশি রোগী হওয়ায় টাকা-পয়সা নেয়া, রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া ও নমুনা সংগ্রহে বিলম্ব হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছেন বলে তারা জানান।

আইসিডিডিআরবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডায়াগনস্টিক ইউনিটটিতে আসলেই জনবল সঙ্কট রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবহিত আছেন ও সেখানে জনবল নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

প্রকাশ :জুলাই ২৮, ২০১৮ ১:১৬ অপরাহ্ণ