নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সড়কের দু’পাশের শখের বাগান, ঝুুপড়িঘর ও ছৈওয়ালা নৌকায় প্রকাশ্যে বসে মাদকের আড্ডা। তরুণ-তরুণী ছাড়াও নানা শ্রেণি পেশা ও বয়সের লোকজন শামিল হয় এ আড্ডায়। এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীর দৃষ্টিকটূ আচরণে বিব্রত হয় পথচারী। বিনোদনের উদ্দেশ্যে আগতদের বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাদকদ্রব্য বিক্রি ও তা সেবনের আড্ডাকে কেন্দ্র করে চলে চাঁদাবাজি। ঘটে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরাই ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট। পুলিশের ছত্রছায়ায় এসব হয়ে থাকে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরের শাহ আলী কাঁচাবাজার থেকে তুরাগ হয়ে উত্তরার সংযোগ সড়ক পর্যন্ত এলাকাটি বেড়িবাঁধ হিসেবে পরিচিত। বেড়িবাঁধের মিরপুর শাহ আলী মাজারের মোড় থেকে ধউর মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে বেড়িবাঁধে বেড়াতে আসা যুগল ও দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক সাজে গড়ে উঠেছে অনেক রেস্টুরেন্ট। পানির ওপর বাঁশের মাচায় তৈরি করা হয়েছে এসব রেস্টুরেন্ট। এতে রয়েছে বিশেষ টং বা ঝুপড়িঘর। খাবার তৈরির জায়গা থেকে অনেকটা দূরে গড়ে উঠেছে এসব টংঘর। বিশেষ কায়দায় তৈরি এসব টংঘরের নিরিবিলি পরিবেশের সুযোগ নিয়ে অনেকেই নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় সেখানে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেস্টুরেন্টের এসব টংঘরে একবার খাবারের অর্ডার দিলে ১ ঘণ্টা থাকা যায়। তবে কেউ এর চেয়ে বেশি সময় কাটাতে চাইলে প্রতি ঘণ্টার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়। খাবারের বিল ছাড়াও টংঘরে বসার জন্য ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। অনেক স্পটে ঘণ্টা হিসেবে টাকা নেওয়া না হলেও দর্শনার্থীরা যেসব খাবার খান তার বিল দ্বিগুণ বা তিনগুণ আদায় করা হয়। এসব ঘর সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থাকে মুখর ।
সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ থেকে ইয়াবার চালান আসে বেড়িবাঁধ এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকসেবীদের কাছ থেকে পুলিশও মাসোহারা পায় । এজন্য নাম দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও পরদিন আবারও ইয়াবা সেবনের আড্ডা বসে। স্থানীয় এক চা বিক্রেতা বলেন, এই এলাকায় বেহায়াপনার পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেশি। পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া। কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজনের ভিসা কার্ড, মোবাইল ও টাকা হাতিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের (দারুসসালাম জোন) সহকারী কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাক’কে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তারপরেও কয়েকদিন আগে গাবতলীর ওয়ার্কশ ও হোটেলগুলোতে সাঁড়াশী অভিযান চালিয়েছি। এছাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করেছি। তথ্য সংগ্রহ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফের অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে অনেক সমস্যাও আছে। এখানে ট্রাক-শ্রমিকসহ নানা মহল জড়িত । মাদক বা বেহায়াপনায় যেই জড়িত হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। আগের তুলনায় এসব এলাকায় অপরাধ অনেক কম বলেও দাবি করেন তিনি।