নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোটা সংস্কার নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে দুই শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে সামনে মানববন্ধন করতে গেলে এই হামলা চালানো হয়। এতে ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগ কর্মীরা উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষককেও গালিগালাজ করে।
জানা যায়, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ আলী আর রাজী কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এর জেরে দুই শিক্ষকের বিচার দাবি করে ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় তারা।
শিক্ষকদের হুমকি ও প্রতিহত করার ঘোষণার প্রতিবাদে ওই বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। তবে মানববন্ধন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটির মধ্যে ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী এসে হামলা করে।
এসময় ছাত্রলীগের কর্মীরা সাধারণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধর করে এবং মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা কয়েকজন শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা ব্যানার ও ফ্যাস্টুন কেরে নেয় তারা।
অন্যদিকে, গত মঙ্গলবার দুপুরে অবাঞ্চিত ঘোষণার পর দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে চবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছে তারা। যার কারণে ওই দুই শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতার কারণে মঙ্গলবার থেকে ক্যাম্পাস আসছেন না।
মানববন্ধনে উপস্থিত নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাহমান নাছির বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভিন্ন মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। রাজনীতি ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যে কোন মতামত প্রকাশে করতে পারবে, বঙ্গবন্ধু নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টে এই মতামতের স্বাধীনতা দিয়েছে। এই মতামতের জন্য কোন সংগঠন কোন শিক্ষককে অবাঞ্চিত ঘোষনা করতে পারে না।
এছাড়াও মানববন্ধনে হামলার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, যারা মানববন্ধন করেছে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং যারা বাধাঁ দিয়েছে তারাও শিক্ষার্থী। এই বাধাঁ দেওয়া মোটেও কাম্য নয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম বলেন, আমাদের দুই শিক্ষককে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিলাম। হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে এসে আমাদের মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে হামলাকারী চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ বিজ্ঞান ও গ্রন্থকার বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল হাসান দিনার বলেন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করেন। যার প্রতিবাদে আমরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু সেই মাইদুল ইসলামের পক্ষে যারা মানববন্ধন করতে ছিল আমরা তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নিয়াজ মোর্শেদ রিপন বলেন, মানববন্ধনে কি হয়েছে তা আমরা জানি না। আমাদের কাছে মানববন্ধনের কোন অনুমতিও নেয়া হয়নি। এছাড়াও মানববন্ধনে হামলার বিষয়ে কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে নাই।