নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটানায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে জাবি শাখা ছাত্রদল। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসনের কাছে ১৮ দফা দাবিও পেশ করেছে।
শনিবার শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম সৈকত সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
তাদের দাবি গুলো হলো-
১। সিঅ্যান্ডবি থেকে বিশ মাইল পর্যন্ত ফ্লাই-ওভারব্রিজ বা উড়াল সেতু নির্মানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
২। প্রান্তিক গেটে ফুট ওভারব্রিজ তৈরি (ফ্লাই-ওভারব্রিজ তৈরির আগ পর্যন্ত থাকবে)।
৩। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি গেটে গতিরোধক নির্মাণ।
৪। যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ।
৫। অনতিবিলম্বে আন্দোলনারীদের নামে দায়ের করা অবৈধ মামলা প্রত্যাহার।
৬। শহীদুল ইসলাম তুষার (সহ-সভাপতি, ছাত্রদল), ফাতেমা, আরাফাত, নাজমুল সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রত্যেক পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা অতিদ্রুত প্রদান সহ পরিবারের অন্তত একজনের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদান।
৭। আহত ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিক এবং ভ্যানচালকের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান।
৮। অতিদ্রুত ঘাতক চালককে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি এবং ঘাতক পরিবহনের রোড পারমিট বাতিলের ব্যবস্থা করা।
৯। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগ, শিক্ষক নামধারী সন্ত্রাসী এবং পুলিশী হামলার বিচার।
১০। প্রান্তিক গেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে স্থাপিত পুলিশ ক্যাম্প ক্যাম্পাসের বাহিরে স্থানান্তর।
১১। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে পুলিশ সহ সকল রাষ্ট্য়ী বাহিনীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি।
১২। ভবিষ্যৎতে মৃত ছাত্রছাত্রীদের নামাযে জানাযা ক্যাম্পাসে পড়ানোর নিশ্চয়তা প্রদান।
১৩। এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে যাদের নামাযে জানাযার অনুমতি দেয়া হয় নাই তাদের পরিবারের কাছে লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা।
১৪। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ছিনতাই বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন।
১৫। ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাস সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন।
১৬। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বরত ডাক্তারের অপসারণ।
১৭। দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল সকল সদস্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি।
১৮। সার্বিক ঘটনায় নিজের নিয়ন্ত্রণ না থাকা এবং ব্যথর্তা প্রমাণিত হওয়ায় উপাচার্যকে সেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়ও তারা বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলেন, গত ২৬ মে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। কিন্তু নিহত দুই শিক্ষার্থীর নামাযে জানাযা’র অনুমতি না দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা প্রশাসনের অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে ডেইরি গেটে রাস্তার পাশে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন। কিন্তু আমরা দেখেছি- বাংলাদেশের একমাত্র জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। আন্দোলনকারী এবং সাংবাদিকদের উপর উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের লাঠি চার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং গুলিবর্ষণ করে। এমনকি বাসভবনে উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক নামধারী সন্ত্রাসীদের অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হামলা করে। অন্ধকারে উপাচার্যে বাসভবন ভাঙ্গচুর করে উল্টো ছাত্রছাত্রীদের নামে মামলা এবং গভীর রাতে ১০-১২ জন ছাত্রীসহ ৪২ জন ছাত্রছাত্রীকে গ্রেফতার করে এবং সকল আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্রছাত্রীদের বহিঃস্কারের দাবি জানায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি প্রেক্ষিতে নিপীড়ক প্রশাসন, শিক্ষক নামধারী সন্ত্রাসী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ’র অমানবিক, নির্মম, নিষ্ঠুর, ঘৃণ্য আচরণ সহ হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ