নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বব্যাপী রমজান চলছে, মুসলিমরা বরণ করে নিয়েছেন এ মাসকে। দিনে হইহুল্লোড় কম। রাতে পাড়া-মহল্লায় চারদিকে মসজিদে মসজিদে তারাবিতে হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত।
ঘরে ঘরে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই যার যার মতো করে ইবাদতে মশগুল আছেন। বাচ্চাদের মাঝে শুরু হয়েছে রোজা রাখার প্রতিযোগিতা। পাঁচ বছরের ছেলেমেয়েরাও বায়না ধরছে রোজা রাখার। এ যেন অন্য একরকম প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ। জান্নাতি পরিবেশ। সবাই যেন একে অপরের সহযোগিতায় ব্যস্ত। কাউকে একটুখানি ইফতারিতে শরিক করতে পারলে অনাবিল এক আনন্দে ভরে ওঠে মন। মসজিদে মসজিদে রোজাদারদের ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে ধনী-গরিব সবাই মিলে এক দস্তরখানে বসে ইফতারি করার আনন্দই আলাদা। নানা কিসিমের ইফতারি আয়োজনে সৃষ্টি হয় এক অনাবিল সুখ। আর ঘরে ঘরে ভোররাতে সেহরির আয়োজন এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রাণবন্ত রামজানের প্রধান শর্ত হল ইখলাস। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিই হবে রোজার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কারণ, যে কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার প্রধান শর্তই হল ইখলাস। কোরআন–ল কারিমে ইখলাসের সঙ্গে ইবাদতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুরা বাইয়েনাহ : ৫।
সাওম শুদ্ধ ও প্রাণবন্ত হওয়ার জন্য যেমন কতগুলো বিধান আছে, তেমনি সাওম ভেঙে যাওয়ারও কতগুলো কারণ আছে। সেগুলো জেনে আমল করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাওম পালনকারীদের সেগুলো আগেভাগেই জেনে নিতে হয়। আবার সিয়াম পালনরত অবস্থায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞজনদের শরণাপন্ন হয়ে এর সমাধান জেনে নিতে হয়।
প্রাণবন্ত সিয়ামের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- ১. আল্লাহর একটি ফরজ নির্দেশ পালন করতে পারা। এ এক মহা নেয়ামত। অনেকেই তা বুঝতে অক্ষম। আফসোস, আল্লাহর কত বান্দা এ নেয়ামত থেকে বঞ্চিত।
২. এ মাসে ঈমানের সঙ্গে সওয়াব প্রাপ্তির আশায় যে সাওম পালন করবে, তার অতীত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। বুখারি : ৩৮।
৩. সাওমকে আল্লাহ নিজের জন্য বলেছেন এবং তিনি নিজেই এর সম্মাননা বিতরণ করবেন। বুখারি : ১৮৯৪।
৪. সিয়াম কেয়ামত দিবসে রোজাদারের জন্য সুপারিশ করবে। বলবে, হে রাব্ব! দিনের বেলায় তাকে আমি পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি। তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো। মুসনাদ আহমাদ : ৬৬২৬।
৫. রোজাদারদের জন্য জান্নাতে ভিআইপি মর্যাদায় গেট নির্মিত থাকবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কারও প্রবেশাধিকার থাকবে না। গেটের নাম হবে ‘রাইয়ান’। ডাকা হবে, ‘কোথায় রোজাদারগণ! তখন তারা উপস্থিত হবে। অন্য কেউ তাদের সঙ্গে থাকবে না। তাদের প্রবেশের পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্য কেউ আর সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ বুখারি ও মুসলিম।
৬. জান্নাতি হতে চান? সিয়াম পালন করুন। আবু উমামা (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমলের নির্দেশনা দিন যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন করো। কেননা এর কোনো তুলনা নেই।’ ইবন হিব্বান : ৩৪৯৪।
৭. এ মাসে দেখা যায় ঘরে ঘরে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা। ছোটবড় সবাই সুযোগ করে প্রতিদিন কমবেশি কোরআন তেলাওয়াত করেন। এক বা একাধিক খতম করে থাকেন।
৮. অন্যান্য মাসের তুলনায় পুরুষরা এ মাসে মসজিদে জামায়াতে সালাত আদায়ে যন্তবান হন। একইভাবে মেয়েরাও এ মাসে সালাত আদায়ে সচেষ্ট থাকেন।
৯. ছোট্টমণিরাও এ থেকে পিছিয়ে থাকে না। বড়দের অনুসরণে তারাও রোজা রাখে। সালাতসহ ইফতারি ও সেহরিতে অংশগ্রহণ করে আনন্দে মেতে ওঠে।
১০. এ মাসে সবাই গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। সাধ্য অনুযায়ী সবাই দান-সদকার হাত প্রসারিত করে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে সে দায় কিছুটা হলেও পালনে সচেষ্ট হয়। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে প্রবহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান-সদকা করতেন। এছাড়াও রয়েছে রোজার মাসের অনেক অনেক বৈশিষ্ট্য।