লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
কোকাকোলা কার্বোনেটেড কোমল পানীয়। কোম্পানিটির দাবি অনুসারে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে কোকাকোলা বিক্রি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে অবস্থিত দ্য কোকাকোলা কোম্পানি এ পানীয় উৎপাদন করে। এটি সংক্ষেপে কোক নামে পরিচিত। আবার ইউরোপ-আমেরিকায় এটির আরেক নাম হচ্ছে ‘পপ’।
কোকাকোলা উৎপত্তি হয়েছিল ওষুধ হিসেবে। ঊনিশ শতকে জন পেম্বারটন নামক একজন রসায়নবিদ কোকাকোলার ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। তিনি দাবি করেছিলেন, কোকাকোলা মরফিন আসক্তি, বদহজম বা অজীর্ণ, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা, ধ্বজভঙ্গ তাড়ায়।
শুরুতে এটার নাম ছিল কোকা ওয়াইন, যাকে বলা হতো ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো- এরকম বিশ্বাসের কারণে পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই এটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে বাজারজাতকরণের প্রথম বছরে কোকাকোলা বিক্রয় হয়েছিল মাত্র নয় গ্লাস। বর্তমানে পৃথিবীতে কোমল পানীয় হিসেবে প্রতিদিন কোকাকোলা বিক্রয় হয় প্রায় ১৬০ কোটি গ্লাস। ১৯৮৫ সালেই স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জারের নভোচারীরা স্পেস ক্যানের সাহায্যে প্রথম সফট ড্রিঙ্কস হিসেবে কোক পান করেন। ভাবা যায়, ফেসবুকে কোকাকোলা পেইজের ভক্ত সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি!
অথচ স্রেফ কার্বোনেটেড ওয়াটার, চিনি, ক্যাফেইন, ফসফরিক এসিড আর প্রাকৃতিক ফ্লেভার দিয়ে কোকাকোলা তৈরি হয়। কিন্তু এসব উপাদানের অনুপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। কোকের মূল উপাদান কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি করে জারের মাধ্যমে বিশ্বের নয়শ কোক প্লান্টে পাঠানো হয়। এটির নানাবিধ প্রয়োগ রয়েছে। তবে নিচের দশটি বিচিত্র প্রয়োগ বেশ আলোচিত।
১. মরচে তাড়াতে কোকাকোলার জুড়ি নেই। যেসব গৃহস্থালি জিনিসে মরচে ধরেছে, সেগুলোকে কোকে সারারাত ডুবিয়ে রেখে সকালে ভালো করে ঘষুন। মরচে থাকবে না। কারণ কোক মরচের অণু ভেঙে ফেলে।
২. কাচের জানালা পরিষ্কারেও কোক অতুলনীয়। তবে এক্ষেত্রে সামান্য সাইট্রিক এডিস যোগ করতে হবে। কাচের ওপর কোক আর সাইট্রিক এসিডের দ্রবণ ফেলে ঘষুন। তারপর ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে তা মুছে নিন। না মুছলে কোকের চিনির অবশেষ কাচের ওপর ভেসে উঠতে পারে। গাড়ির কাচ পরিষ্কারে বাজারে প্রচলিত যে কোনো ক্লিনারের চেয়ে এটা বেশ সস্তা ও কার্যকর।
৩. কোকাকোলা রেঁধেও খেতে পারেন! অর্ধেক বারবিকিউ সস আর অর্ধেক কোক মিশিয়ে দুর্দান্ত ম্যারিনেড তৈরি করা যায়। এই ম্যারিনেডে মাংস ভিজিয়ে রেখে প্রয়োজনীয় মসলা মেখে চুলা বা ওভেনে তুলে দিন। খাবারের স্বাদ হবে অতুলনীয়। মাংসের ওপরে থাকবে চিনির হালকা আস্তরণ। ক্যারামেলের ফ্লেভার নাকে লাগবে। কোকের সাইট্রিক অ্যাসিড মাংসের স্বাদ বাড়াবে। শুধু তাই নয়, কোকের কারণে মাংসের ঔজ্জ্বল্যও বাড়বে।
৪. বেড়াল জাতীয় উদ পরিবারের স্তন্যপায়ী প্রাণি ভয় পেলে একটা উৎকট বাজে গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। এ বিশ্রী গন্ধ তাড়াতে বালতির পানিতে সামান্য ডিটারজেন্ট আর কোকের দ্রবণ বানিয়ে রেখে দিলে দ্রবণটি বাজে গন্ধ শুষে নেয়।
৫. কোকাকোলা একটি দুর্দান্ত পেইনকিলার। জেলিফিশ হুল ফুটালে ভয়ানক ব্যথা লাগে। আক্রান্ত স্থানে কোক ছিটিয়ে দিন। ব্যথা থাকবে না।
৬. রান্নার পাত্রের তলায় মাঝে মাঝে কালো দাগ পড়ে। এক লিটার কোক ঢেলে হালকা আঁচে এক ঘণ্টা তাপ দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। দাগ থাকবে না।
৭. কাপড়ে লাগা গ্রিজের দাগ তোলা বেশ কঠিন এবং এ দাগ তোলার রিমুভার বেশ দামি। সহজ সমাধান হচ্ছে, এক ক্যান কোকের সঙ্গে সাধারণ ডিটারজেন্ট মেশান। এ মিশ্রণ ওয়াশিং মেসিনে ঢেলে সাধারণভাবে কাপড় কাচুন। কাপড়ে রক্ত লাগলে অথবা কাপড় থেকে বাজে গন্ধ বের হলেও একই তরিকা কার্যকর।
৮. বাগান থেকে শামুক, শামুকের গুড়িসহ অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত জীব তাড়াতে কোক খুবই কার্যকর। থালে সামান্য কোক ঢেলে তা বাগানে রেখে আসুন। এসব উপদ্রব থাকবে না। গাছের ডাল আর পাতা থেকে বিভিন্ন ভাইরাস আর ছত্রাক তাড়াতেও কোক ঢেলে দিন।
৯. পেটে গড়বড় শুরু হলে এক গ্লাস কোক খান। বমিভাব চলে যাবে। ডায়রিয়া আর গলায় ঘা থাকলেও এটা কার্যকর।
১০. কোক দিয়ে বিস্ফোরকও তৈরি করা যায়। এক গ্লাস কোকে একটি মেন্টোস চকলেট ঢেলে দিন। অস্বাভাবিক বুদ বুদ দেখা যাবে। এটার নাম দেয়া হয়েছে ডায়েট কোক-মেন্টোস আগ্নেয়গিরি।
দৈনিক দেশজনতা /এন এইচ