নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর লাগামহীন দুর্নীতির জেরে ধুঁকছে বেসিক ব্যাংক। ঋণের নামে ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ডাকাতি হয়েছে।
অনিয়মের কারণে পরিচালনা পর্ষদ ভাঙা ও তৎকালীন এমডিকে অপসারণ করা হলেও ব্যাংকটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে তৎকালীন চেয়ারম্যান, এমডি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। টানা চার বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, লোকসান এবং মূলধন ঘাটতি নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছে ব্যাংকটি। গত বছর ব্যাংকটি লোকসান করেছে ৬৮৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেক অর্থাৎ ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।
ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পর ২০১৩ সালের মার্চে ঋণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ওই চার বছর তিন মাসে ব্যাংকটি ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়, যার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ার পর প্রথমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। ২০১৪ সালের ২৯ মে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর ৪ জুলাই অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে পদত্যাগপত্র দেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। পরে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বমোট ৫৬টি মামলা করে দুদক। যদিও ওইসব মামলায় বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে বাচ্চুর বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করছে দুদক।
বেসিক ব্যাংকের গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯ সালেও প্রায় ৬৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করে ব্যাংকটি। পরে ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। পরের বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনছে ব্যাংকটি। গত ২০১৩ সালে ৫৩ কোটি, ২০১৪ সালে ১১০ কোটি, ২০১৫ সালে ৩১৪ কোটি ও ২০১৬ সালে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করে বেসিক ব্যাংক। সর্বশেষ ২০১৮ সালে নিট লোকসান করেছে ৬৮৪ কোটি টাকা।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাপক হারে ঋণ বিতরণ করায় এখন আর সেটা আদায় হচ্ছে না। বেনামে ও অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি খেলাপির খাতায় চলে গেছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার ঋণ।
ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৫২ দশমিক ৭৩ শতাংশই এখন খেলাপি। এ ছাড়া কুঋণ হয়ে যাওয়ায় ৪৪৩ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আয় করতে পারছে না ব্যাংকটি। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে পারছে না ব্যাংকটি। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
ঋণ ডাকাতির সময় ব্যাংকটির মূলধনও খোয়া গেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যদিও গত চার অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরও ৩০০ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি