নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্নের কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের উপজেলা পর্যায়ের দেড় শতাধিক সহকারী প্রোগ্রামার। নিয়ম ‘বহির্ভূতভাবে’ পদোন্নতি দাবি করে মামলা দায়ের করে এ পদের নিয়োগ আটকে রেখেছেন তারা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ক্ষমতাবলে ২০১৫ সালে কম্পিউটার কাউন্সিলের ২টি প্রকল্প থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের উপজেলা পর্যায়ের সহকারী প্রোগ্রামার পদে অস্থায়ীভাবে ১৮৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগকালীন সময় শর্ত ছিল, এইসব সহকারী প্রোগ্রামারের চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর চাকরিকাল আরও ৫ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হবেন না। অন্যদিকে এই ৫ বছরের আগে সহকারী প্রোগ্রামার থেকে প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতি দিয়ে নিয়োগ দিতে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রোগ্রামার পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া যাবে।
এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের অধীনে জনবল সংকটের কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে প্রোগ্রামার পদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। পরে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ করে গত বছরের ৬ নভেম্বর ৫৬ জনকে জেলা পর্যায়ের জন্য প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু এই সুপারিশের পরপরই সহকারী প্রোগ্রামারদের কয়েকজনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। পর আদালদের নির্দেশে প্রোগ্রামার পদে নিয়োগে
সুপারিশকৃতদের নিয়োগ আটকে যায়। এভাবে একের পর এক মামলা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার সহকারী প্রোগ্রামার নূরুল আমীনের দায়ের করা হাইকোর্টে এক রিটের পর গত ৬ ডিসেম্বর অধিদফতরকে ওই সংক্রান্ত জবাব দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক গত ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের জবাবে বিস্তারিত তুলে ধরে এক চিঠিতে বলেন,
‘শর্তসাপেক্ষে সহকারী প্রোগ্রামার পদে ২০১৫ সালে ১৮৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তাদের সেই শর্ত পূরণ হয়নি, তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি এমনকি পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য বলেও বিবেচিত হননি। ফলে আইসিটি অধিদফতরে জনবল সংকটের কারণে পিএসসির মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আইসিটিতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, আইসিটি কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও বেগবান করতে এবং ই-সার্ভিস টেকসই করার জন্য আইসিটি অধিদফতরের জনবল বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। জেলা পর্যায়ে প্রোগ্রামার পদ থাকা সত্ত্বেও পদগুলো ফাঁকা রয়েছে। এতে করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’ এরপরও সহকারী প্রোগ্রামাররা একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম খায়রুল আলম।
তারা মামলা কেন করছেন? জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম খায়রুল আলম বলেন, ‘তাদের দাবি তাদেরকে সহকারী প্রোগ্রামার থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিয়োগের সময় স্পষ্টভাবে শর্তে বলা ছিল, তারা পাঁচ বছর চাকরি করার পরই কেবল প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। কিন্তু তাদের তো চাকরির বয়স মাত্র ৩ বছর।
এছাড়া তারা এখনও স্থায়ী হননি। এদিকে আমাদের প্রচুর জনবল সংকট। পরে জনবল নিয়োগের জন্য পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষা সম্পন্ন করে ৫৬ জনকে প্রোগ্রামার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের একের পর এক মামলার কারনে এই নিয়োগটি আটকে আছে। তারা আজও (বুধবার) একটি মামলা করেছে।‘
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাদের প্রকল্প থেকে দয়া করে অধিদফতরের সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ করলেন সেই তারাই এখন প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছেন। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই বিরক্ত। প্রকল্প থেকে এভাবে কাউকে নেওয়ার নিয়ম নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ ক্ষমতাবলে ১৮৯ জনকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ সেই তারাই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তাদের কারণে আমাদের অধিদফতরের আরও বেশ কিছু নিয়োগ আটকে রেয়েছে। সেগুলোও এভাবে মামলা দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে।‘
তিনি বলেন, ‘যদিও তাদের এসব মামলা টিকবে না, তারপরও এই যে হেনস্থা করা, নিয়োগে সময়ক্ষেপন করানো, এগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বাধাগ্রস্থ করছে।
দৈনিক দেশজনতা /এন এইচ