কৃষি ডেস্ক :
চট্টগ্রামের কাপ্তাই উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় দেশীয় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশীয় লিচুর পাশাপাশি অনেকে চায়না-৩ নামের লিচুর চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে লিচুতে সয়লাব হয়ে গেছে। এক শ্রেণির বেপারিদের কারণে ফলন বেশি হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে বেশি দাম দিয়ে লিচু কিনে খেতে হচ্ছে। এ বছর একেকজন লিচু চাষি খরচ উঠিয়ে প্রচুর লাভ করতে পারবে বলে আশা করছে ।
উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি পতিত জমিতে বছরের পর বছর ধরে সুমিষ্ট দেশীয় লিচুর চাষ করা হচ্ছে। একেকটি লিচু গাছের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। তেমন কোন পরিচর্যা করতে দেখা যায় না এসব লিচু গাছের। পরিচর্যা করা হলে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যেত বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলার চেয়ারম্যানপাড়ার সুব্রত চাকমা (৩০) জানান, এক একর জমিতে ২০টি লিচু গাছ রোপন করে তার বাবা। এগুলোর একেকটির বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। চলতি বছরে ৩০টি গাছের লিচু বিক্রি করে তিনি লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবে বলে আশা করেন।
কামিলাছড়ি পাড়ার সাবিত্রি চাকমার রয়েছে ৩৫টি গাছ। এসব গাছ থেকে তিনি ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। তাদের মত একই পাড়ার কাজল কান্তি দেওয়ান, দয়ারাম চাকমা, সোনালিকা চাকমা, জ্ঞান প্রকাশ চাকমা, কালাচান চাকমা চলতি বছর লিচু বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন। এছাড়া এ মৌসুমে উপজেলার জীবতলী, নাভাঙ্গা, বরাদম, রাইখালী, ওয়াগ্গা ইউনিয়নেও প্রচুর পরিমাণে লিচুর ফলন হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে লিচু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন বলে জানান।
লিচুচাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন কাপ্তাই নতুন বাজারে প্রায় হাজার হাজার লিচু সরবরাহ হচ্ছে। দেশীয় প্রজাতির প্রতি একশ’ লিচু তারা ১’শ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছে। চায়না-৩ লিচু প্রতি একশ লিচু ২’শ-৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। লিচুচাষিরা আরো জানায়, এ এলাকায় লিচু সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে হারে এলাকায় লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমী ফলের উৎপাদন হয়-তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বিপুল পরিমাণ ফল নষ্ট হয়ে যায়। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা আর্থিকভাবে আরো বেশি লাভবান হতো।
রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাইয়ের বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিদিন উপজেলার উপশহরখ্যাত চন্দ্রঘোনায় সিএনজি ট্যাঙি, পিকআপ ভর্তি করে লিচু বিক্রির জন্য আনা হয়। চন্দ্রঘোনা, লিচুবাগান, ফেরিঘাট, দোভাষীবাজার এলাকায় দৈনিক প্রায় ৬/৭ লাখ লিচু প্রায় আট লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা চাহিদামাফিক লিচু কিনছেন। দেশীয় ভালমানের বড় লিচু বিক্রি হচ্ছে ২’শ টাকায়। ছোট জাতের লিচু ৯০ টাকা থেকে ১শ৫০ টাকা পর্যন্ত। লিচুর ন্যায্যমূল্য ও বেচাবিক্রি ভাল হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে।
লিচুবাগান ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অনুকূল আবাহাওয়া থাকায় পাহাড়ে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক থেকে ক্রয় করে হাটে লিচু বিক্রি করে মোটামুটি লাভ জনক হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। চন্দ্রঘোনা এলাকায় ভাসমান ব্যবসায়ীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লিচু ব্যবসায়ী রয়েছেন।
তিনি প্রতিদিন প্রায় ৪/৫ হাজার লিচু বিক্রি করেন। শুধুমাত্র চন্দ্রঘোনা লিচুবাগানে দৈনিক লিচু বিক্রি হচ্ছে আট টাকা। পাহাড়ে বিভিন্নস্তরে চাঁদা দেয়ার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা লাভবান কম হচ্ছে। লিচু বিক্রেতা জয় তংচংগ্যা জানান, ওয়াগ্গা এলাকায় প্রচুর লিচু ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে শতশত কৃষক লিচু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে। তার বাগানে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গাছে লিচু ফলন হয়েছে। সব বিক্রি করতে পারলে তিনি লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ