নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। এ সময়ে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। যা পুরো অর্থবছরের জন্য সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থবছরের পুরো সময়ের জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা থাকলেও নির্বাচনী বছরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমাবে না সরকার। উল্টো সঞ্চয়কারীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া সহজ ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। সারাদেশের সঞ্চয়পত্রের অফিসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। যাতে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র ক্রয়, নগদায়ন এবং মুনাফা তোলার জন্য অফিসে যেয়ে, ঘরে বসেই অনলাইনে করা যায়।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে সঞ্চয়পত্রসহ সব ধরনের জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে তিন হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ এসেছে। চলতি অর্থবছরে একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ নিট বিনিয়োগ এসেছিল জানুয়ারী মাসে। ওই মাসে বিনিয়োগ এসেছিল পাঁচ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর আগে ফেব্রয়ারি মাসে নিট
বিনিয়োগ এসেছিল চার হাজার ১৫৭ কোটি। গত ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে নিট বিনিয়োগ হয়েছিল দুই হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। গত নভেম্বরে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, অক্টোবরে চার হাজার ৬২০ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে তিন হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, আগস্টে তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা এবং অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, প্রতিদিনের সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ থেকে আগের বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটি অবশিষ্ট থাকে, সেটাকেই নিট বিক্রি বলে হিসাব করা হয়।
তথ্য বিশেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে নিট বিনিয়োগ ছিল ২৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। যা ওই অর্থবছরের জন্য এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার নির্ধারিত ঋণের লক্ষ্যমাত্রার ১১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। ওই অর্থবছরে সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান বিশেষণে দেখা যায়, আলোচ্য নয় মাসে সঞ্চয় স্কিমগুলোর মধ্যে বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে। এখানে গত নয় মাসের নিট বিনিয়োগ ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, এখানে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১০ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে তিন হাজার ১০৮ কোটি টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে দুই হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। তা ছাড়া মেয়াদি হিসাবে জমাকৃত অর্থ রয়েছে পাঁচ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে নিট বিনিয়োগ আছে এক হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকবহির্ভূত উত্স থেকে সরকারের ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়ার কথা রয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি উভয় উত্স থেকেই ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটায় সরকার। অভ্যন্তরীণ উত্সর মধ্যে আগে বেশি ঋণ আসত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। সামপ্রতিককালে বেশি ঋণ আসছে ব্যাংকবহির্ভূত উত্স থেকে। ব্যাংকবহির্ভূত খাতের প্রধান উত্স সঞ্চয়পত্র। এছাড়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতেও ঋণ নেওয়া হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে’র পর থেকে এ হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
উল্লেখ্য, এখন সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানো ও মুনাফা সংগ্রহ করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। সঞ্চয়পত্রের টাকার জন্য বই জমা দিয়ে টোকেন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। মাস শেষে মুনাফার টাকা ও মেয়াদ শেষে আসল টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। আর টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে গ্রাহকের মোবাইল শট ম্যাসেজ সার্ভিস (এসএমএস) ও ইমেইল করে জানিয়ে দেওয়া হয়। সময়, অর্থের সাশ্রয় ও ভোগান্তির দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) নামে গত বছর একটি একটি সফ্টওয়্যার চালু করে। এ সফট্ওয়ারের মাধ্যমেই গ্রাহকরা এ সুবিধা পাচ্ছেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ