নীলফামারি প্রতিনিধি :
আইনী জটিলতায় চার বছরের বেশি সময় হাসপাতালের হিমঘরে থাকা ধর্মান্তরিত হোসনে আরা লাইজুর (নীপা রানী) লাশ শুক্রবার ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দাফন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের১নং ওয়ার্ড কাজীপাড়া কবরস্থানে জানাযার নামাজ শেষে স্বামীর কবরের পার্শ্বে তার লাশ দাফন করা হয়।
শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিকেলে নীলফামারি জেলার ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে স্বামীর কবরের পাশে লাইজুর লাশ দাফন করা হয়। এসময় আদালতের নির্দেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গেলো ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ লাইজুর লাশ দাফনের এ নির্দেশ দেন।
জানা যায়, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বামুনিয়া গ্রামের অয় কুমার রায়ের মেয়ে নীপা রানী রায়ের (২০) সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন ফরিদ লাজুর (২৩) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যান তারা। এরপর নীপা রানী রায় ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার পরিবর্তিত নাম হয় হোসনে আরা বেগম লাইজু। নীলফামারীতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামার মাধ্যমে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমায়ুন ফরিদ লাইজুকে বিয়ে করেন।
পরে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে তার বাবা অক্ষয় কুমার রায় নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ের সব কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দী প্রদান করেন হোসনে আরা। পরে আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেন। তখন অক্ষয় কুমার রায় আপিল করেন। এতে তিনি মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিষ্কবিকৃতি দাবি করে কাগজপত্র দাখিল করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মেয়ের শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
পরে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি তার স্বামী বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে অক্ষয় কুমার রায় তার মেয়েকে নিজ জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। একই বছরের ১০ মার্চ কীটনাশক পান করেন তার মেয়ে। পরে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান। পরদিন নীলফামারী জেলার মর্গে লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়।
এরপর পুত্রবধূ দাবি করে তার শ্বশুর জহুরুল ইসলাম ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক দাফন ও মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে মেয়ের সৎকারের জন্য নীলফামারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালতে উভয় পরে শুনানির পর মরদেহ শ্বশুরের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন অক্ষয় কুমার। আপিলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত মরদেহ তার বাবার কাছেই হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন লাইজুর শ্বশুর। পরে আবেদনটির নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট শ্বশুরের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ