নিজস্ব প্রতিবেদক:
পড়াশোনা করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অ্যাকাউন্টিংয়ে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে আউট সোর্সিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছিলেন। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান হয়েও লোভেই ফাঁদে পা দেন। কক্সবাজারের বন্ধুর হাত ধরে এমরানুল হক ও তাইজুল খান নামে দুই বন্ধু ইয়াবার ব্যবসায় জড়ান। শুক্রবার দুপুরে ৬০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালানসহ গ্রেফতার হন তারা।
রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন পোস্তগলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবার চালানটিসহ একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৯-০৩৮৩) জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
তাইজুল ইসলাম জানান, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ শেষ করে ভালোই ব্যবসা করছিলেন। কেরানীগঞ্জস্থ বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় একসঙ্গেই তাদের বসবাস। মাদারীপুরের উত্তর দুধখালী এলাকার মোতালেব খানের ছেলে তাইজুল।
তাইজুল বলেন, “আউট সোর্সিংয়ের ব্যবসায় পার্টনার অপর বন্ধু এমরানুল হক। এমরানুলের বাড়ি কক্সবাজারের পৌর বাস টার্মিনালের পাশে। সেখানকার উজ্জ্বল নামে একজনের হাত ধরে মোটা অংকের টাকা আয়ের লোভে ইয়াবা ব্যবসায় জড়ান তারা।
তিনি বলেন, ‘৩/৪ মাস আগ থেকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়ান। মোবাইলফোনেই তাদের গন্তব্য জানিয়ে দেয়া হতো। আর ইয়াবা আসতো সেই উজ্জ্বলের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে। চালান হাতে পাবার পর তা প্রাইভেটকারে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন। আজ গ্রেফতারকালে কৌশলে পালিয়ে যায় উজ্জ্বল।’
এমরানুল হক বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) ইয়াবার চালান পৌঁছে দেবার কথা ছিল উত্তরায়। উত্তরার জাকির নামে একজন এ ইয়াবা কেনার কথা। ইয়াবা হাতে পাবার পরই লোকেশন জানানো হতো। সেই অনুযায়ী পৌঁছে যেতেন উত্তরায়। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়েন যান।
তিনি বলেন, ‘বড় ভুল করে ফেলেছি। অল্প সময়ে ইনভেস্ট ছাড়া বড় মুনাফা লাভের লোভেই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়েছি। এখন নিজের মানসম্মানের সঙ্গে পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সম্মানও থাকছে না।’
ইয়াবা ও প্রাইভেটকারসহ তাদের গ্রেফতারের পর শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) ডিআইজি সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অভিযান ও গোয়েন্দা পরিকল্পনা কৌশলগত কারণে বদলেছি। যে কারণে সফলতা পেয়েছি। মাদকের চালানসহ ধরা পড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ক্যারিয়ার (বাহক)।
তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে আমাদের কাছে তথ্য ছিল ইয়াবার চালান আসবে টেকনাফ থেকে। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে নির্ঘুম রাত্রী যাপনে ঢাকা মেট্রো’র গুলশান সার্কেলের একটি টিম তাদের নজরদারিতে রাখে। ইয়াবার বড় চালান কেনার কথা বলে তাদের ফাঁদে ফেলা হয়। দুপুরে ওই ৬০ হাজার পিস ইয়াবার চালান কেনার সময় তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত দুজনই আমাদের লিস্টেট মাদক ব্যবসায়ী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তৈরি করা তালিকা ধরে ধরে বাকিদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ঢাকা মেট্রো) গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শ্যামপুর থানায় মাদক আইনে মামলা হবে। ওই মামলায় আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে। তাদের নেপথ্যে থেকে কারা ইয়াবার চালান আনছে আর কারা ক্রয় করছে তাও খুঁজে বের করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান, উপ-পরিচালক মুকল জ্যোতি চাকমা, ঢাকা মেট্রো’র সহকারী পরিচালক (এডি) খুরশিদ আলম।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ