বিশেষ সংবাদদাতা
সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে একটি বিশাল বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যার শিরোনাম ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’। শুধু বাজেটটি বিশাল নয়, এই বাজেটে ঘাটতিও বিরাট। টাকার অঙ্কে বাজেট ঘাটতি লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অংশ হিসেবে যা ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব আজ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হচ্ছে তার আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি থাকবে এক লাখ ১২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। ঘাটতির বিশাল অংশটি পূরণ করা হবে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে। যার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিদেশী সাহায্য থেকে নেয়া হবে। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আগামী বাজেটও পুরোটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণও কমে যাবে। তাই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণও কমবে।
আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৮৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাপ্তি দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) আকার এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেটটি উপস্থাপন করবেন। এর আগে জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার এক বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেটটি অনুমোদন করিয়ে নেবেন অর্থমন্ত্রী।
ভ্যাটের হার কমছে : নতুন আইনে ভ্যাটের হার প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমালোচনার মুখে শেষ মুহূর্তে এই হার এক বা দুই শতাংশ কমানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভ্যাটের নতুন হার ১৩ বা ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে ভ্যাটের হার কমানো হলে টার্নওভার ট্যাক্স বিদ্যমান ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হবে। আর এইসব কিছু আজ মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে অনুমোদন করিয়ে নেয়া হতে পারে।
বর্তমানে সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্যে কিংবা ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট দেয়া বেশকিছু পণ্য ও সেবায় আগামী বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতে শেষ সময়ে এসে কৃষি, খাদ্য, শিাসহ আরো দুই শতাধিক পণ্য ও সেবা যোগ হবে। বিশেষত দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন বেশকিছু খাত ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় আসতে যাচ্ছে।
অন্য দিকে, ১৭০টি পণ্য বাদে বাকি এক হাজার ৩৪৯টি আমদানিকৃত পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসছে সরকার।
এ ছাড়া ব্যাংকে আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ হচ্ছে বাজেটে। ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর দেড় শ’ টাকার স্থলে দুই শ’ টাকা দিতে হবে। তবে এক লাখ টাকার ওপর থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বিদ্যমান পাঁচ শ’ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা গুণতে হবে। ১০ লাখ টাকার ওপরে এক কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর দেড় হাজার টাকার স্থলে তিন হাজার টাকা, এক কোটির ওপরে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর সাড়ে সাত হাজার টাকার স্থলে ১৫ হাজার টাকা, পাঁচ কোটি টাকার ওপরে যেকোনো পরিমাণ অর্থের ১৫ হাজার টাকার স্থলে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। প্রসঙ্গত সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল।
বাজেটে মেগা প্রকল্পের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকছে। ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর অর্ধেক ব্যয় হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। আর বড় প্রকল্পগুলোতে জোর দেয়ার কারণে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১০ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বাড়বে। ব্যয় বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ১০ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ল্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। চলতি বাজেটে ৪৩ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা ছিল। ওই হিসাবে ব্যয় বেড়েছে ৩১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। যে কারণে আগামী বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩৩ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ের জন্য সম্ভাব্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে প্রায় ২ হাজার ৭০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বর্তমান বাজেটটি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এগারতম বাজেট। একাধারে নয়বার বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। অন্য দু’টি বাজেট তিনি দিয়েছিলেন এরশাদের আমলে। এর আগে এক মাত্র সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ১১ বার বাজেট দিয়েছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারো ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেট বক্তৃতার অংশ হিসেবে থাকবে বাজেটের সংক্ষিপ্তসার; বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি; সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি; মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি; বিকশিত শিশু : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা : হালচিত্র ২০১৭; জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা; জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন; সংযুক্ত তহবিলপ্রাপ্তি; বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭; মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন); বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন); মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংক্ষিপ্তসার ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ হতে সরবরাহ করা হবে। একই সাথে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী-২০১৬-১৭ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ