দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
দেখতে দেখতে ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার আট বছর অতিবাহিত হলেও জেলায় দাকোপ উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৯২৬টি পরিবার এখনো ভেড়িবাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকা দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন জনপদে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। নিমিষেই লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপজেলার তিনটি পোল্ডার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় কামারখোলা ও সুতারখালী দুইটি ইউনিয়ন। প্রাণ হারায় ১৬ জন, নিখোঁজ হয় ৭ জন ও আহত হয় ১১ জন। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুটেরও বেশি পানি বৃদ্ধির ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭৫.৫ কিলোমিটার ওয়াপদা ভেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত এবং অসংখ্য পুকুর, চিংড়ি ঘের ডুবে কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
এছাড়া জমির ফসল, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ এবং গৃহহীন হয় দুইটি ইউনিয়নের ২৯৮৩২টি পরিবার। আইলার পর সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতিতে পানিতে ভেসে যাওয়ার পর সরকারের অধিক অর্থ ব্যয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ক্লোজার আটকিয়ে দুর্গত এলাকাকে ২০১০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পানিমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আইলা বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, দুর্গত ২৭৯০৬টি পরিবার ঘরে ফিরলেও কামারখোলার ২৬টি ও সুতারখালীর ১৯০০টি পরিবার— মোট দুইটি ইউনিয়নের ১৯২৬টি পরিবারের ভিটেবাড়ি আইলায় সম্পূর্ণ গ্রাস করায় তারা ভেড়িবাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে এখনো পর্যন্ত অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছে। কালাবগী এলাকার সাইফুল্লা গাজী বলেন, আইলায় শিবসা নদীগর্ভে ভিটে-বাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হওয়ায় এবং আর কোনো জায়গা-জমি না থাকায় ভেড়িবাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে অভাব-অনটনের মধ্যদিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। কাজ না থাকায় আমাদের মতো এখানকার অনেক পরিবার জীবন-জীবিকার সন্ধানে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে চলে গেছে।
এ বিষয়ে সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, ভেড়িবাঁধের উপর বসবাসকারীদের জায়গা-জমি না থাকায় এবং অনেকের জায়গা ভেড়িবাঁধের বাইরে পড়ায় ঘরে ফিরতে পারছে না। সরকার নতুন করে পুনর্বাসন না দিলে আর কোনোদিন এদের বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে ফেরা হবে না। এছাড়া এলাকার মানুষের নেই কোনো কর্মসংস্থান।
কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল বলেন, এ ইউনিয়নে ২৬টি পরিবার ভেড়িবাঁধের উপর বসবাস করছে। এদের জমি না থাকায় সরকারি খাস জমি নির্ধারণ এবং গৃহ নির্মাণ করে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আঃ কাদের জানান, সরকারি কোনো প্রকল্প বা প্রজেক্ট না থাকায় দুর্গতদের জন্য কোনো কিছু করার নেই।