২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:০০

কোরআনের আয়াত জ্ঞানের অদৃশ্য চাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বৈচিত্র্যে ভরা পৃথিবীর উদ্ভিদ জগৎ। সব ক্ষেত্রেই আছে এদের বৈচিত্র্য। বৈচিত্র্য আছে বলেই এদের সহজভাবে ভেষজ বা ঔষধি হিসেবে এবং দৈনন্দিন জীবনেও তার নানা উপকারের কথা বর্ণনা করা যায়। কোরআনে ‘বিচিত্র বর্ণ’ অর্থে ‘আল-ওয়ানুন মুখতালিফুন’ (সাতবার) বলে একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর ভেতরে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মধ্যকার নানা বৈচিত্র্য নিয়ে গূঢ় রহস্য উন্মোচনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

কোরআনে বলা হয়েছে- তুমি কী দেখ না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করেন। (৩৫:২৭, ৩৫:২৭)। এভাবে (পৃথিবীতে) রং-বেরঙের মানুষ, জন্তু ও আনআম রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাকে ভয় করে। (৩৫:২৮)।

ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য আল্লাহর নিদর্শন। এতে জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে। (৩০:২২)। উপদেশ গ্রহণের জন্য পৃথিবীতে বিচিত্র রং-বেরঙের বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। (১৬:১৩)।

এখানে একটি বিষয় বেশ কয়েকবারই বলা হয়েছে, উদ্ভিদের এ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিতে বিজ্ঞানী-চিন্তাবিদদের জন্য নানা উপকরণ রয়েছে। যেমন- রঞ্জক পদার্থ ক্লোরোফিল, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল, অ্যান্থোসায়ানিন, প্লাস্টিড, ক্রোমোপ্লাস্ট, লিউকোপ্লাস্ট, ক্রোমোজোম, লাইসোজোম ইত্যাদি; যা গবেষণার মাধ্যমে অনুসন্ধান করে বের করে আনার ইঙ্গিত রয়েছে। বিশেষ করে ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ভিদের বিভিন্ন গঠন, আকৃতি এবং গুণাগুণ (ঔষধি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে) ও তার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা লক্ষ করা যায় তার পেছনে রয়েছে কোরআনের এ আয়াতগুলোর অনুপ্রেরণা।

যেখানে বলা হয়েছে- তুমি কী লক্ষ কর না, আল্লাহ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? কলেমায়ে তাইয়্যেবা বা সৎ বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষ (শাজারুন) যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত; যা প্রত্যেক মৌসুমে ফল দান করে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে- এ উপমা মানুষের শিক্ষার জন্য।

এমনিভাবে কলেমায়ে খাবিস বা খারাপ বাক্যের তুলনা এমন এক নিকৃষ্ট বৃক্ষ (শাজারুন) যার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। যার কোনো স্থায়িত্ব নেই। (আল কোরআন-১৪:২৪-২৬)। অর্থাৎ এখানে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তার অপূর্ব সৃষ্টি নিদর্শন উদ্ভিদ ছাড়াও অন্যান্য সৃষ্টির রহস্য নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে তথা আমলে সালিহ বা ভালো কাজের সুদূরপ্রসারী ফলাফল বর্ণনা করে মানুষকে সেই গবেষণায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।

মানব জীবনের সঙ্গে উদ্ভিদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। উদ্ভিদ ছাড়া যেমন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না, তেমন মানুষ ছাড়াও উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে না। এ রহস্য আবিষ্কারের জন্য মানুষকে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অতি শক্তিশালী ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করতে হয়েছে। মানুষ আর উদ্ভিদের এই যে গভীর সম্পর্ক তা বোঝার জন্য প্রথমেই দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ আল কোরআনে বর্ণিত উদ্ভিদসংক্রান্ত তথ্যগুলো একত্রে রেখে।

কারণ এখানেই ইঙ্গিত রয়েছে- এ ‘কিতাবে (জ্ঞান-বিজ্ঞানের) কোনো কিছুই আমি বাদ দেইনি। (আল কোরআন-৬:৩৮)। অর্থাৎ আমাদের চোখের সামনে এবং অগোচরে (পানির ভেতর) এই যে বিশাল উদ্ভিদ জগৎ রয়েছে তা প্রতিনিয়ত মানবমণ্ডলীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করছে।

প্রতিদিন বহু উদ্ভিদের পাতা চোখের সামনে ঝরে যাচ্ছে, অর্থাৎ তারও এক ধরনের মৃত্যু ঘটছে। সেই পাতা মাটিতে মিশে নাইট্রোজেনে পরিণত হয়ে সালোক-সংশ্লেষণের মাধ্যমে উদ্ভিদের শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করছে। আবার নতুন পাতা সৃষ্টি হচ্ছে, অর্র্থাৎ তার নতুন জীবন ফিরে আসছে। একে নাইট্রোজেন চক্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এদিকেই ইঙ্গিত দিয়ে কোরআনে স্পষ্ট করা হয়েছে- আমি মৃত্তিকা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি, সেখানেই তোমাদের ফিরিয়ে দেব এবং সেখান থেকেই আবার তোমাদের বের করব। (২০:৫৫)। এখানে চিন্তাশীল-জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে। (৩০:২২)।

অন্যত্র বলা হয়েছে, আকাশ থেকে বারি বর্ষণের পর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত হয় এবং তা দিয়ে বিচিত্র বর্ণের ফসল উৎপন্ন করা হয়। অতঃপর তা শুকিয়ে হলুদ বর্ণ হয়ে খড়কুটোয় পরিণত হয়। এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য। (৩৯:২১)।

ফসল যে হলুদ বর্ণ ধারণ করে এর মধ্যেও রয়েছে এক অপূর্ব নিদর্শন এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। যেখানে বলা হয়েছে- বৃষ্টিতে উৎপাদিত ফসলের সমাহার কৃষকের মনকে খুশিতে ভরিয়ে দেয়, অতঃপর একদিন তা শুকিয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে তুমি দেখতে পাও, তা (পাতা) হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করেছে। (৫৭:২০)। কোরআনে হলুদ বর্ণ অর্থে সাফরা-উ/মুসফাররান শব্দটি উল্লেখ আছে ৫ বার।

এ আলোচনার সঙ্গে কোরআনের এক অদ্ভুত মিল লক্ষ করা যায়। এ আয়াতে যেখানে বলা হয়েছে- ‘আর অদৃশ্যের চাবিগুলো তার কাছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ সেগুলো সম্পর্কে জানে না আর জলে-স্থলে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। তার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও (ওরাক্বাতুন) পড়ে না এবং মাটির অন্ধকারে কোনো শস্যদানা নেই এবং নেই কোনো ভেজা ও শুষ্ক বস্তু যা একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।’ (আল-কোরআন-৬:৫৯)। যাদের অন্তর দৃষ্টি আছে তারা এসব দেখে। হায় মানুষ কবে অন্তরওয়ালা কোরআনওয়ালা হবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :এপ্রিল ২৮, ২০১৮ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ