২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:২৯

বাংলাদেশিদের রোহিঙ্গা সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠাচ্ছে পাচারকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।  বাংলাদেশের  পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নৌকাযোগে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেও পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ায় এমন ৭৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে জেলেরা। এবিসি নিউজের মঙ্গলবারের খবর থেকে আসল রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের রোহিঙ্গা বানিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পাচারের কথা জানা গেছে। পুলিশের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হেরি রুডলফ নাহাক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান সম্পর্কে  জানিয়েছেন, এটা ছিল আন্তর্জাতিক অভিযান। তিনি জানিয়েছেন, ইন্দোনেশীয় পুলিশ এএফপি ও নিউ জিল্যান্ড পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। কারণ এই পাচারের লক্ষ্য ওই সব দেশ। আর ইন্দোনেশিয়া মানবপাচারের ট্রানজিট।

ইন্দোনেশিয়ার পুলিশের পক্ষ থেকে এই প্রথমবারের মতো কোনও পাচারচক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের বিস্তারিত জানানো হয়েছে।  এবিসি নিউজ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইন্দোনেশীয় পুলিশ পাচার চক্রে জড়িত তিন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেছে। এদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা রয়েছে।

পুলিশের দাবি অনুযায়ী অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের জন্য চক্রটি জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পুলিশের মহাপরিচালক জানান, পাচারকারীরা ছয় বাংলাদেশির জন্য ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে। তাদেরকে স্পিডবোটে করে মালয়েশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া নিয়ে আসা হয়। এরপর কালিমানতান ও জাভা হয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদেরকে পাপুয়া নিউগিনির মেরাউকিতে পাচার করা হয়। কারণ এটা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী। পাচারকারীরা এরপর স্থানীয় মাছধরার নৌকা ভাড়া করে এদেরকে অস্ট্রেলিয়া পাঠায়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাহাক বলেন, পুরো পাচার পরিকল্পনার মূল হোতা একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। অনেক আগে সে ইন্দেনেশিয়ায় প্রবেশ করে বাস করছিল। সে ইন্দোনেশীয় ভাষায় পারদর্শী। পরে সে মানবপাচারকারীতে পরিণত হয়। বাংলাদেশিদের অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর জন্য চক্র গড়ে তোলে। পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গা পরিচয় দেওয়া পাচারের শিকার বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় কাজ করছিল। পাচারকারীরা তাদের বেশি আয়ের লোভ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছিল।সহানুভূতিশীল একটি ইন্দোনেশীয় গোষ্ঠী পাচারের শিকার এসব মানুষের জন্য চাঁদা তুলে বিমানের টিকিট কিনে দিয়েছিল। পুলিশের মহাপরিচালক নাহক জানান, ইন্দোনেশিয়ার মানুষ যাত্রাপথে এই মানুষদের সহযোগিতা করেন। কারণ তারা নিজেদের মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বলে দাবি করে।

ইন্দোনেশীয় পুলিশের মতে, সন্দেহভাজন তিন পাচারকারীর একজন রোহিঙ্গা। অপর দুজন বাংলাদেশি ও ইন্দোনেশীয়। নাহাক জানান, পুলিশ আটক বাংলাদেশিদের কাছ থেকে এটিএম কার্ড, বিমানের টিকিট ও ১৬ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার সমমূল্যের মুদ্রা উদ্ধার করেছে।

সাক্ষী সুরক্ষায় বাংলাদেশিরা

মেরাউকির বাসিন্দাদের সন্দেহ হওয়ার তারা পাচারের শিকার হওয়া বাংলাদেশিদের সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশকে জানায়। এরপর গত বছরের শেষ দিকে তাদের আটক করা হয়। আটক বাংলাদেশিরা কর্তৃপক্ষের কাছে পাচারের বিস্তারিত জানায়। সন্দেহভাজনদের বিচারের আগ পর্যন্ত তাদের ইন্দোনেশীয় সাক্ষী সুরক্ষায় রাখা হয়েছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ২৪, ২০১৮ ৪:০৭ অপরাহ্ণ