কৃষি ডেস্ক :
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। এর মধ্যে দেবগ্রাম অঞ্চলে ভাঙনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত ১০ দিনের ব্যবধানে পদ্মা নদীর ভাঙনে দেবগ্রাম ইউনিয়নে বিলীন হয়েছে পদ্মাপাড়ের শতাধিক বিঘার ফসলি জমি। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে কয়েকটি পরিবার।
জানা গেছে, উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের চরবরাট থেকে শুরু করে দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তার মোড় হয়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ছেড়ে বাহিরচর ছাত্তার মেম্বারপাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙনপ্রবণ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষা শুরুর অনেক আগেই এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ছোটভাকলা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী চরবরাট, দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেথুরী, সাঁজাপুর, বেতকা ও চরদেলুন্দি এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফেরিঘাট ও পাশের বাহিরচর ছাত্তার মেম্বারপাড়ার (কিছু অংশ) শতাধিক বিঘার ফসলি জমি।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত শুরু না হলেও বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বেশ কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস থাকায় নদীতে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় ঢেউ। ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে পদ্মার পাড়। গত ১০ দিনে পদ্মা পাড়ের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও গাছপালা ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি তুলে ফেলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
সরেজমিন দেবগ্রামের অন্তার মোড় ও ছোটভাকলার চরবরাট এলাকার পদ্মার তীরে দেখা যায়, বাতাসে নদী প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। পাশেই কয়েকটি শূন্য ভিটা পড়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে, কয়েক দিন আগেও এখানে ছিল বসতবাড়ি। হয়তো নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে পরিবারগুলো অন্যত্র গেছে। আর এ ভাবনাকে সত্য বলে জানালেন স্থানীয় কয়েকজন।
দেবগ্রামের অন্তার মোড় পদ্মাপাড়ে লোকজন নিয়ে ধান মাড়াই শেষে খড় শুকাচ্ছিলেন আকের আলী ও খায়রুল শেখ। তাঁরা জানান, কয়েক দিন ধরে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস দেখা দেয়। আর এই সময় নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। আতঙ্কে স্থানীয় তিনটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। তাঁরাও গত বছর ভাঙন শুরু হওয়ার পর এ জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। নদীর পাড় থেকে প্রায় ১০০ গজ ভেতরের দিকে কয়েক দিন আগেও কয়েকটি বসতভিটা ছিল বলে তাঁরা জানান।
ছোটভাকলা ইউনিয়নের চরবরাট গ্রামের সুন্নত খাঁ জানান, গত সাত থেকে আট দিনে নদীর পাড় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট ভেঙেছে। কয়েক দফা ভাঙনের শিকার হয়ে দুই বছর আগে চরবরাট গ্রামে এসে তিনি বসবাস শুরু করেন। এই বছর এখানেও থাকা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা হচ্ছে তাঁর। কারণ, বর্ষা শুরুর আগেই যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে বর্ষায় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা ভাবতেই পারছেন না। একই ধরনের আতঙ্কের কথা বললেন ওই গ্রামের মৈজদ্দিন শেখ।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে গত ১০ দিনের ব্যবধানে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বিঘার ফসলি জমি। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে কয়েকটি পরিবার।
ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার। তিনি বলেন, কয়েক বছরের ভাঙনে ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের অধিকাংশ গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে ইউনিয়নের ভৌগোলিক সীমা দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। এলাকাবাসীর দাবি সত্ত্বেও ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসার উদ্দিন বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেবগ্রামের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আবদুল জব্বার বলেন, পদ্মার পাড় ভাঙন রোধে নদীশাসনের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই কাজ করছেন। দ্রুত পদ্মা নদী শাসন করা না হলে গোয়ালন্দসহ রাজবাড়ী শহর রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ